২০০১ সালের ১৬ জুন। লাভপুর থানার লাঘাটা গ্রামের আদিবাসী পাড়ার রূপালি হেমব্রম নিখোঁজ হয়ে যান। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। এরপর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর।
পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোনও লাভ হয়নি। অবশেষে তাঁকে মৃত ধরে নেওয়া হয়। হয়ে যায় পারলৌকিক আচার— শ্রাদ্ধ, শান্তি সবকিছু। সন্তান হারায় মা, স্বামী হারায় স্ত্রীকে। সেই অধ্যায় শেষ হয়েছিল সকলের মনে।
ভিনরাজ্যের ফোনে নতুন আশার আলো
সম্প্রতি এক অচেনা ফোন আসে লাঘাটার হোটেল ব্যবসায়ী সুবীর মণ্ডলের কাছে। ফোনটি করা হয়েছিল রাজস্থানের ভরতপুর জেলা থেকে। গুগল ম্যাপে ‘লাঘাটা’ নাম সার্চ করে সুবীরবাবুর নম্বর পাওয়া যায়। ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তি জানতে চান—এটি বীরভূম জেলার লাভপুর থানার লাঘাটা গ্রাম কি না।
এরপরই উঠে আসে একটি নাম— রূপালি হেমব্রম। কথায় কথায় চলে আসে ছবি আদানপ্রদানের প্রসঙ্গ। ভিডিও কলে রূপালিকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁর স্বামী বিশু হেমব্রম ও সন্তানরা। তাঁরা নিশ্চিত হন, ওই নারীই তাঁদের দীর্ঘদিনের হারানো মা।
‘আপনা ঘর’ আশ্রম থেকে ফেরা জীবনের গল্প
রূপালি হেমব্রম বর্তমানে রয়েছেন রাজস্থানের ‘আপনা ঘর’ নামে একটি আশ্রমে। মানসিক ভারসাম্য হারানো অবস্থায় তাঁকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ধীরে ধীরে স্মৃতি ফিরে আসে তাঁর। তখনই আশ্রম কর্তৃপক্ষ পরিবারের খোঁজে নামেন।
রূপালির খোঁজ মেলার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গোটা এলাকা চমকে ওঠে। কারণ, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর তাঁর এক সন্তানের মৃত্যু হলে, পরিবারের বিশ্বাস ছিল—রূপালিও নেই। তাঁর বয়স এখন ৬০ বছরের বেশি। কিন্তু ফিরে এলেন নিজের বাড়িতে, জীবনের এক অদ্ভুত চক্রপথে।