টিকিট কেটেছেন আগেভাগেই, মনেও আশা ছিল নির্ঝঞ্ঝাটে সৈকত শহর দিঘা পৌঁছনোর। কিন্তু সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার স্টেশন চত্বরে সেই আশাই ভেঙে চুরমার হল। দিঘা যাওয়ার জন্য টিকিট থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে উঠতে না পেরে একের পর এক যাত্রী ফেটে পড়লেন তীব্র ক্ষোভে। মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রেলস্টেশন, শুরু হল বিক্ষোভ।
দিঘা যাচ্ছেন? ভিড়ের কথা ভাবুন আগে!
এমনিতেই দিঘার পথে ট্রেনের সংখ্যা যথেষ্ট কম। পাঁশকুড়া-দিঘা রেলপথে মাত্র দুটি এক্সপ্রেস ট্রেন—তাও নিয়মিত লেট। ফলে যাত্রীদের ভরসা শুধুই লোকাল ট্রেন। সম্প্রতি জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর পর্যটকদের ভিড় আরও বেড়েছে। সরকারি বাস থেকেও যাত্রী নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে। এমতাবস্থায় লোকাল ট্রেনই একমাত্র অবলম্বন।
নন্দকুমারে বিক্ষোভ, পুলিশ এসে বোঝালো
সোমবার সকালে যাত্রীদের একটি বড় অংশ নন্দকুমার স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, ট্রেনটি পাঁশকুড়া থেকেই এতটাই ভর্তি হয়ে আসে যে, পরবর্তী স্টেশনগুলিতে উঠার কোনো সুযোগই রইল না। হালে পানি না পেয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পৌঁছায় রেল পুলিশ।
পুলিশ যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ভিড় বেশি হলেও ট্রেনে ওঠা আটকানো সম্ভব নয়, কারণ প্রত্যেক যাত্রীই বৈধ টিকিট কেটেই উঠেছেন। পাল্টা যাত্রীরা বলেন, সেটা দেখা রেলের দায়িত্ব, যাত্রীদের নয়। ঘণ্টাখানেকের হট্টগোলের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
আগেও ঘটেছে একই ঘটনা
এই প্রথম নয়। কয়েক দিন আগেই লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক স্টেশনেও একইভাবে টিকিট কেটে ভিড় ট্রেনে উঠতে না পেরে যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। একাধিকবার এমন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় যাত্রীদের দাবি জোরালো হচ্ছে—“আর না! ট্রেন বাড়াতে হবে।”
কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
নন্দকুমার স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, “ভিড়ের কারণে অনেকেই উঠতে পারেননি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জানিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও বাস্তবে কবে সেই ব্যবস্থা কার্যকর হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
কী চাইছেন যাত্রীরা?
যাত্রীদের দাবি খুব পরিষ্কার—
- দিঘা রুটে ট্রেন সংখ্যা বাড়াতে হবে
- লোকাল ট্রেনের জন্য সুবিধাজনক সময়সূচি ও নির্দিষ্ট কোচ রাখতে হবে
- স্টেশনে নিয়ন্ত্রণ রাখতে অতিরিক্ত রেল পুলিশ মোতায়েন করা হোক
উল্লেখ্য, একদিকে টিকিট কেটে নিশ্চিন্তে যাত্রা করার আশ্বাস, অন্যদিকে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে হতাশা—এই বৈপরীত্য থেকেই জন্ম নিচ্ছে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ। যাত্রীদের এই দীর্ঘদিনের সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।