কলকাতা শহর ফের একবার জর্জরিত হচ্ছে ডেঙ্গির প্রকোপে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ জন। সঙ্গে রয়েছে করোনা ভাইরাসেরও নতুন উত্থান। দুই মারণ রোগের যুগলবন্দীতে আতঙ্কে নাগরিক, চিন্তায় স্বাস্থ্য প্রশাসন।
কোন চার বরো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত?
স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, বরো নম্বর ৭, ১০, ১১ ও ১২—এই চারটি বরো এলাকায় ডেঙ্গির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এই এলাকাগুলিতে জমে থাকা জল, অপরিষ্কার নিকাশি ব্যবস্থা এবং বাড়ি-বাড়ি সচেতনতার অভাবই মূলত ডেঙ্গি ছড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বরোগুলিতে ঘনঘন ফগিং এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি চালানো হলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ম্যালেরিয়াও রয়েছে তালিকায়
শুধু ডেঙ্গিই নয়, চলতি বছরে কলকাতায় ম্যালেরিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছেন ২০৪ জন। শুরুর মাসগুলিতেই এমন পরিসংখ্যান বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বর্ষাকাল আরও দীর্ঘ হতে পারে বলেই আবহাওয়াবিদদের অনুমান, সেই আশঙ্কার মধ্যেই পুরসভা দাবি করছে—পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে।
সঙ্গে ফিরছে করোনা, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪৪
ডেঙ্গির পাশাপাশি নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কোভিড-১৯। রাজ্যে বিগত তিন দিনেই ২১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে সোমবার একদিনেই আক্রান্ত ৪৪ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯৬১। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে—দিল্লির (৪৭ জন) পরেই।
চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা: “এই হিমশৈলের চূড়া মাত্র”
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. সৌমিত্র ঘোষ বলেন, “এটা টিপ অফ দ্য আইসবার্গ মাত্র। সংখ্যাগুলি যেভাবে বাড়ছে, তা বিপদের ইঙ্গিত। আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই, সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।”
প্রশাসনের দাবি: “পরিস্থিতি নজরে, আতঙ্ক নয়”
কলকাতা পুরসভার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ডেঙ্গি এবং করোনা—উভয়ের দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। নিয়মিত বাড়ি-বাড়ি পরিদর্শন, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, ফগিং এবং টেস্টিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে জনগণকেও সচেতন থাকতে হবে—জমে থাকা জল পরিষ্কার রাখা, মশারি ব্যবহার এবং উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
করোনা বাড়ছে দ্রুত, সাত দিনে ১২ থেকে ৩১৯
বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল, মাত্র সাত দিনেই রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১৯। চিকিৎসকরা বলছেন, উপসর্গহীন সংক্রমণ ও বাড়িতে পরীক্ষার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণ ধরা পড়ছে না। তাই টেস্টিং বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে।
সামনে কি অপেক্ষা করছে নতুন লকডাউন?
যদিও এখনই লকডাউনের প্রশ্নে কেন্দ্র বা রাজ্য কিছু বলেনি, তবে দুই ভাইরাসের একসঙ্গে প্রভাব জনজীবন ব্যাহত করার আশঙ্কা তৈরি করছে। বিশেষত বর্ষাকাল সামনে থাকায় মশাবাহিত রোগ বাড়ার প্রবণতা এবং সংক্রমণ ছড়ানোর গতি দুটিকেই প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

