ভারতীয় সংস্কৃতিতে সান্ধ্যকাল বা সন্ধ্যেবেলার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। দিনের আলো যখন মিলিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারে ঢোকে, তখনই নাকি প্রকৃতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে নানা রকম অশুভ শক্তি। তাই এ সময়টায় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি বলে মনে করেন বাস্তুশাস্ত্রবিদরা। সন্ধের সময় কিছু নির্দিষ্ট জিনিস যদি কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে তা আমাদের জীবনে ডেকে আনতে পারে দুর্ভাগ্য, অর্থকষ্ট ও পারিবারিক অশান্তি। এই প্রতিবেদনে দেখে নিন, বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী সন্ধের পর কোন কোন জিনিস কাউকে দেওয়া উচিত নয় এবং এর পিছনে যুক্তি কী।
সন্ধ্যেবেলার মাহাত্ম্য কী?
ভারতীয় ঘরানায় সন্ধে হল একান্ত পবিত্র সময়। এই সময় বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো, শাঁখ বাজানো, আরতী করা—এসব নিয়ম মানা হয় যাতে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখা যায়। কিন্তু এই সময় যদি কাউকে কিছু দেওয়া হয়, তাহলে সেই পজ়িটিভ এনার্জি নষ্ট হয়ে যায়। বাস্তুশাস্ত্র বলছে, এতে সংসারে অশান্তি, আর্থিক ক্ষতি এবং স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা বাড়ে।
সন্ধ্যের পর কী কী জিনিস কাউকে দেবেন না?
১. নুন : শাস্ত্র অনুযায়ী, নুন হল মা লক্ষ্মীর প্রতীক। সন্ধ্যের পর কাউকে নুন দিলে তা লক্ষ্মীর বিদায় হিসাবে ধরা হয়। এতে ঘরে অর্থাভাব দেখা দেয়, সংসারে বিরোধ ও অশান্তি বাড়ে। যদি কাউকে নুন দিতেই হয়, তাহলে সন্ধের আগেই দিন, এবং বিনিময়ে কিছু অর্থ গ্রহণ করুন।
২. টাকা :
সন্ধ্যের পর কাউকে টাকা দেওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। এর ফলে অর্থসঞ্চয়ে বাধা আসে এবং সংসারে অভাব দেখা দিতে পারে। মা লক্ষ্মীর কৃপা কমে যায় বলেও শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
৩. দুধ : দুধ হল শুভ শক্তির প্রতীক। বাস্তুশাস্ত্র বলছে, সন্ধ্যের পর দুধ দিলে নেগেটিভ এনার্জি আকৃষ্ট হয়। এতে ঘরে রোগব্যাধি এবং মানসিক অশান্তি বাড়তে থাকে।
৪. তেল ও ঘি : তেল বা ঘি হল আলো ও শক্তির বাহক। সন্ধ্যের সময় এগুলি কাউকে দিলে ঘরের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়। বাস্তুশাস্ত্র মতে, এতে জীবনে অনিশ্চয়তা বাড়ে।
৫. প্রদীপ ও মোমবাতি : এই দুটি বস্তু আলোক ও পবিত্রতার প্রতীক। সন্ধ্যের সময় কাউকে প্রদীপ বা মোমবাতি দিলে ঘরে অন্ধকার ও দুর্ভাগ্যের ছায়া নামে বলে মনে করা হয়। শুভ শক্তি হ্রাস পায়।
৬. ঝাঁটা : ঝাঁটা হল মা লক্ষ্মীর এক রূপ। তাই সন্ধ্যের পর ঝাঁটা দিলে তা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। লক্ষ্মী চলে যান, সংসারে দারিদ্র্য বাসা বাঁধে।
কেন এই নিয়মগুলি মানা জরুরি?
বাস্তুশাস্ত্র শুধু একগুচ্ছ কুসংস্কার নয়—এগুলো বহু প্রাচীন অভিজ্ঞতার নির্যাস। সন্ধে এমন এক সময় যখন মানসিকভাবে আমরা ক্লান্ত থাকি, শক্তির পরিবর্তন ঘটে। এই সময় সতর্ক আচরণই সংসারে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য, আধুনিক জীবনযাত্রার চাপে আমরা অনেক সময়ই প্রাচীন নিয়ম মানতে পারি না। কিন্তু বাস্তুশাস্ত্রের এই ছোট ছোট টিপস মানলে হয়তো অনেক বড় ক্ষতি থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই আজ থেকেই সন্ধে নামার আগেই শেষ করুন লেনদেনের কাজ। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।