পাকিস্তান অর্থনৈতিক মন্দায় ডুবছে, আর ঠিক তখনই ভারতের টাটা গোষ্ঠী ৩০ হাজার কোটি টাকার এক মহাবিনিয়োগ ঘোষণা করে পুরো চিত্রটাই বদলে দিল। প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও বিমান পরিষেবা—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে মূলধন ঢেলে দেশের ভিতকে আরও শক্ত করতে চলেছে টাটা সন্স।
এই ঘোষণার পর ভারতের কর্পোরেট মহল তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আলোড়ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ব্যবসায়িক দিক থেকেই নয়, কৌশলগত দিক থেকেও এই বিনিয়োগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
কোন খাতে আসছে বিনিয়োগ?
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, এই ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হবে মূলত পাঁচটি শাখায়—
- টাটা ডিজিটাল
- টাটা ইলেকট্রনিক্স
- এয়ার ইন্ডিয়া
- ডিফেন্স সেক্টর
- ব্যাটারি টেকনোলজি
এগুলি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ভারতের আত্মনির্ভরতা বাড়ানোর বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। এই অর্থ মূলত ‘ইক্যুইটি ইনফিউশন’-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে, অর্থাৎ মূলধন সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলিকে মজবুত ভিত্তি দেওয়া হবে।
চন্দ্রশেখরনের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি
টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকল্পগুলির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এই জন্যই তিনি টাটা কেমিক্যালসের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য, আগামী ২-৩ বছরে এই খাতগুলিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা।
বিশেষ করে টাটা ডিজিটাল ও টাটা ইলেকট্রনিক্স ইতিমধ্যেই ভারতীয় বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এবার তাদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক বাজার।
পাকিস্তান কেন চাপে?
যখন পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে, বিদেশি সাহায্য ছাড়া কার্যত কোনও উপায় নেই—ঠিক তখন ভারতের এই বিপুল বিনিয়োগ অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই বিনিয়োগ ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতা বৃদ্ধির সরাসরি ইঙ্গিত বহন করে।
বিশেষত ভারতের ডিফেন্স সেক্টরে যে হারে বিনিয়োগ বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশটি নিজের প্রযুক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবে। এমনকি, অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির পথও খুলে যেতে পারে।
আত্মনির্ভর ভারত: কথায় নয়, কাজে
এই বিনিয়োগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর “আত্মনির্ভর ভারত” প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। একদিকে যেখানে বৈদেশিক সংস্থাগুলি ভারতে ঢুকতে দ্বিধা করছে (যেমন টেসলা ভারতের কারখানা স্থাপনে আগ্রহী নয়), অন্যদিকে টাটা গোষ্ঠী নিজেই দেশীয় প্রযুক্তির ভিত গড়ে তুলছে।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি
এই বিশাল বিনিয়োগ কেবল টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের দিকেই নয়, ভারতের সার্বিক অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানকেও অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী পাঁচ বছরে এই বিনিয়োগের প্রভাবে ভারতের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে ১০ লক্ষেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে যখন দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তখন টাটার ৩০ হাজার কোটির এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে এক কৌশলগত চাল। এটি শুধু ভারতের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।