Uttam Kumar : উত্তম কুমার—এই নাম শুনলেই বাঙালি দর্শকের চোখে ভেসে ওঠে স্টারডমের এক স্বর্ণযুগ। কিন্তু রুপোলি পর্দার সেই ধ্রুপদী নায়ক ছিলেন একেবারে মাটির মানুষ। মেকআপের বাইরে যে মানুষটি ছিলেন, তাঁর জীবনযাপন আর খাওয়াদাওয়ার ধরণ নিয়েই ছিল সবচেয়ে বেশি কৌতূহল।
ফিটনেস নয়, আসল আকর্ষণ ছিল খাওয়া
আজকের ছিপছিপে সিক্স-প্যাক নায়কদের যুগে যেখানে খাবারের তালিকায় থাকে ক্যালরি গোনা, সেখানে উত্তম কুমার ছিলেন একেবারে বিপরীত। পাতে থাকত তেলেভাজা, মাছ-মাংস, এমনকি মিষ্টিও। কিন্তু শরীরচর্চায় ছিলেন অসম্ভব নিয়মিত। তাই এত ভালো খেয়েও ফিটনেসে কখনও হার মানেননি।
ভেটকি কাঁটা চচ্চড়ি, সুপ্রিয়ার কাজু চিকেন—সব ছিল পছন্দের তালিকা
মা’র রান্না ছিল সেরা। উত্তম কুমারের খাবারের প্রতি টান শুরু হয়েছিল ছোটবেলায় মা’র হাত ধরে। তাঁর প্রিয় তালিকায় উপরের দিকে ছিল ভেটকি মাছের কাঁটা চচ্চড়ি—যা খাওয়ার জন্য প্রতি শনি ও রবিবার ময়রাস্ট্রিটের বাড়ি থেকে ভবানীপুরের বাড়িতে আসতেন। এতটাই প্রিয় ছিল এই রান্না।
স্ত্রী ও প্রেয়সীর রান্নার আলাদা কদর
স্ত্রী গৌরী দেবীর রান্নার প্রশংসা করতেন সকলেই, কিন্তু উত্তম কুমারের হৃদয়ের বিশেষ জায়গায় ছিলেন সুপ্রিয়া চৌধুরী। তাঁর রান্না করা কাজু চিকেন, পাতুরি, চিংড়ি মালাইকারি, মুরগির পাতলা ঝোল, কাতলার ঝাল—সবই ছিল উত্তমের ডিনার প্লেটে বারবার। কাজুরী গুহর ‘লঙ্কা মুরগি’ও ছিল তাঁর পছন্দের রান্না।
১৯৬৭ সালে আসে প্রথম ধাক্কা
সবকিছু পাল্টে যায় ১৯৬৭ সালে উত্তম কুমারের প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পরে। চিকিৎসকের কড়া নির্দেশে তখন তাঁর খাদ্যতালিকায় চলে আসে একাধিক বিধিনিষেধ। প্রিয় তেল-মশলার খাবার বাদ দিয়ে শুধুই মুরগির স্টু ও পাউরুটি খেতে হত।
সুপ্রিয়ার ভালোবাসার রান্না
শুটিং ফ্লোরে এই স্টু তৈরি করে পৌঁছে দিতেন সুপ্রিয়া নিজে। খাবার তখন শুধুই পেট ভরানোর বিষয় ছিল না, হয়ে উঠেছিল যত্ন আর ভালোবাসার প্রতীক। এই সময়েই উত্তম আরও আত্মস্থ হন, দায়িত্ববান হয়ে ওঠেন নিজের শরীরের প্রতি।
খ্যাতি যতই থাক, খাবার ছিল হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের
উত্তম কুমার শুধু বড় অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একান্ত একজন বাঙালি। যাঁর জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, রাগ-ভালোবাসা—সবটাই প্রতিফলিত হত তাঁর খাবারের পছন্দে। মা’র রান্না, স্ত্রী ও প্রেয়সীর হাতের স্বাদ, আর মাঝে মাঝে প্রিয় বন্ধুদের নিমন্ত্রণ—সব মিলিয়ে উত্তম কুমারের খাদ্যজীবন যেন এক চলচিত্রের মতোই স্বাদে ভরা।