Santragachi Station : হাওড়া স্টেশন। পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রীর আনাগোনা। কিন্তু সেই স্টেশন আজ জায়গার অভাবে হাঁসফাঁস করছে। একের পর এক ট্রেন যুক্ত হচ্ছে, অথচ প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো যাচ্ছে না। এই সংকটের সমাধান খুঁজতেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন সাঁতরাগাছির রূপান্তর শুরু হয়েছিল—আর এখন সেই কাজ পৌঁছে গেছে শেষ ধাপে।
নতুন চেহারায় ফিরছে সাঁতরাগাছি
২০২৬ সালের মধ্যেই বিশ্বমানের পরিষেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করবে সাঁতরাগাছি। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, স্টেশনটির আধুনিকীকরণ প্রায় সম্পূর্ণ। মাঝখানে করোনা ও লকডাউনের কারণে কাজ থমকে থাকলেও এখন জোরকদমে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে।
এক ছাদের তলায় সব পরিষেবা
নতুন করে তৈরি হওয়া বহুতল রেল কমপ্লেক্সটি গড়ে উঠেছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের লাগোয়া জমিতে। এ যেন রেল নয়, এক আধুনিক বিমানবন্দর! এই বিল্ডিংয়ের মধ্যেই রয়েছে প্ল্যাটফর্ম, টিকিট কাউন্টার, পার্কিং জোন থেকে শুরু করে যাত্রী বিশ্রামাগার—সব এক ছাদের তলায়।
৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের নিচে রয়েছে নতুন কাউন্টার, সামনেই গাড়ি পার্কিং। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমেই সোজা উঠে যেতে পারবেন গাড়িতে।
যাত্রীসুবিধায় নজর
মূল প্রশাসনিক ভবনে সিঁড়ি ছাড়াও থাকছে এসকালেটর। যাঁরা লাগেজ নিয়ে চলাফেরা করছেন, তাঁদের জন্য রয়েছে র্যাম্প। সেই র্যাম্প দিয়েই সহজেই উঠে যাওয়া যাবে ফুটওভারব্রিজে, যা পৌঁছে দেবে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে।
এছাড়াও সাবওয়ের মাধ্যমে যাত্রীরা সোজা পৌঁছে যেতে পারবেন ৬, ৭ ও ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। অর্থাৎ, প্রবীণ যাত্রীদের জন্যও চিন্তা কম।
নতুন ফুটওভারব্রিজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
পুরোনো ফুটওভারব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তার জায়গায় তৈরি হয়েছে দুটি চওড়া ডাবল লেন ফুটওভারব্রিজ। তবে এখনও এই ব্রিজে নেই কোনও এসকালেটর বা লিফট, যা প্রবীণদের জন্য কিছুটা অসুবিধাজনক। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে লিফট বসানো হবে।
৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে একটি র্যাম্প ও দুটি এসকালেটর। যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গোটা স্টেশন চত্বর জুড়ে বসানো হয়েছে আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা।
কিছু অভিযোগ, কিছু আশ্বাস
নতুন ফুটওভারব্রিজে উঠতে এখনো অনেকটা হাঁটতে হয়—এই অভিযোগ তুলেছেন অনেক যাত্রী। পাশাপাশি সাবওয়ে বা ব্রিজে ওঠার জন্য এখনও নেই লিফট বা এসকালেটর, যা বিশেষ করে বয়স্কদের সমস্যায় ফেলছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ জানিয়েছেন, এই দিকগুলিও রেলের নজরে রয়েছে। প্রয়োজনে সাবওয়েতেও এসকালেটর বসানো হবে, এমনই ভাবনা চলছে।
উল্লেখ্য, সাঁতরাগাছির রূপান্তর কেবল এক স্টেশনকে উন্নত করার প্রকল্প নয়, এটা একটি বিকল্প হাব গড়ে তোলার প্রয়াস। ভবিষ্যতের চাপ নিতে প্রস্তুত হতে হবে হাওড়া ছাড়াও অন্যান্য স্টেশনগুলিকে। আর সেই রূপান্তরের অন্যতম মুখ সাঁতরাগাছি—যা আগামী দিনে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।