Narendra Modi : ২০২৬-র বিধানসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গ-বিজেপি। তাদের লক্ষ্য একটাই—১৪ বছরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। রাজ্যজুড়ে নেতারা ইতিমধ্যেই তথ্য-প্রমাণসহ প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন, কোথায় কীভাবে তৃণমূল ব্যর্থ হয়েছে তা তুলে ধরতে। কিন্তু হঠাৎই দিল্লি থেকে আসে নতুন সার্কুলার। বলা হয়—আগামী একমাস জুড়ে মোদী সরকারের ১১ বছরের সাফল্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প কীভাবে সাধারণ মানুষকে উপকৃত করেছে, তাও প্রত্যেক জেলায় গিয়ে প্রচার করতে হবে।
গেরুয়া শিবিরের অসন্তোষ: “মেজাজ ধরতে পারছে না দিল্লি”
এই বার্তাতেই ভ্রু কোঁচকেছে বঙ্গ-বিজেপির একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এখন রাজ্যের শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলার সময়। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচার হঠাৎ এত গুরুত্ব পেল কেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। রাজ্য বিজেপির এক প্রবীণ নেতা বলছেন, “লোকসভা ভোট হলে কেন্দ্রের সাফল্য নিয়ে প্রচার ঠিক ছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোটে মানুষ দেখে রাজ্য সরকার কী করেছে। সেখানে দিল্লি আমাদের বলছে মোদীর ঢাক পেটাতে!”
কৌশলগত বিভ্রান্তি: মোদী না মমতা?
এই বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের রাজ্য সফরের সম্ভাবনা। জানা যাচ্ছে, জুন মাসেই বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাংলায় আসবেন। তাঁদের প্রধান লক্ষ্যও হবে—নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য তুলে ধরা। কিন্তু রাজ্যের নেতৃত্ব চাইছেন একটু ভিন্ন কৌশল। তাঁরা চাইছেন, “মোদীকে যত না প্রচার করা হবে, তার থেকে বেশি আক্রমণ হোক মমতার ব্যর্থতাকে।” কারণ তাঁদের মতে, মানুষ রাজ্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে, সেই অসন্তোষকে কাজে লাগাতে হবে।
‘শুধু ঢাক পেটানো নয়, দরকার মমতার মুখোশ উন্মোচন’
রাজ্য বিজেপির কৌশল তৈরি হচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিয়োগ দুর্নীতি, কাটমানি—এসব ইস্যুকে সামনে রেখে। তারা চান,
“১৪ বছরে কী কী করেননি মমতা, সেটাই যেন প্রচারের মুখ হয়ে দাঁড়ায়।” এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় বলেন, “দিল্লি সবসময় চায় একটা ইউনিফর্ম ন্যারেটিভ। কিন্তু বাংলা বরাবরই ব্যতিক্রম। এখানে একমাত্র উপায়, রাজ্য সরকারের অপকর্ম তুলে ধরা।”
আগাম প্রচারে খোয়াতে পারে গতি?
বিজেপির অন্দরেই তাই প্রশ্ন উঠছে, এখনই যদি মোদী সরকারের ১১ বছর উদযাপন শুরু হয়, তাহলে কি সেটা বিধানসভা প্রচারের গতি কমিয়ে দেবে? ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও কি বিভ্রান্তি তৈরি হবে? এক নেতা বলেন, “আসলে দিল্লি মনে করে, মোদীর নামেই সব কাজ হবে। কিন্তু রাজ্যে যে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই প্রকৃত অসন্তোষ—তা তারা হয়তো বুঝছে না।”
দলীয় নির্দেশ মানতে বাধ্য রাজ্যের নেতৃত্ব। তবে তাদের কৌশল স্পষ্ট—মোদী প্রচারের আড়ালে যেন মমতা সরকারের দুর্নীতি চাপা না পড়ে। আগামী একমাসে কীভাবে এই দুই ধারা মিশে প্রচারে রূপ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।