Howrah : শুক্রবার সন্ধ্যা। উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি মোড়। কলকাতা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা যাওয়ার পথে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে হঠাৎই চাঞ্চল্য। এক চলন্ত স্করপিও গাড়িতে আচমকা আগুন লাগে। গাড়ির ভেতরে তখন ছিলেন পাঁচজন যাত্রী। ধোঁয়া দেখে তাঁরা কোনওরকমে দ্রুত বেরিয়ে পড়েন গাড়ি থেকে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে জ্বলতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে থমকে যায় যান চলাচল।
পথচলতি মানুষরাই জানালেন দমকলে খবর, দ্রুত আসে ইঞ্জিন
ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দেন দমকলে ও থানায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের একটি ইঞ্জিন ও উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ। তবে তার আগেই গাড়িটি প্রায় ভস্মীভূত হয়ে যায়। আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে গাড়ির ভিতরের কোনও আসবাব বা যন্ত্রাংশ সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা? প্রাথমিক তদন্তে কী বলছে দমকল?
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে এটি যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, গাড়ির ইঞ্জিনে তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার ফলে অথবা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লেগে থাকতে পারে। পুলিশ একটি অনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। গাড়ির মালিকের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলা হয়েছে। যাত্রীদের বয়ানও নেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীরা বললেন কী?
ঘটনাস্থলে থাকা একজন যাত্রী জানান—“গাড়ি নিমদিঘি মোড়ে পৌঁছতেই একটা তীব্র গন্ধ পাই। সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। আমরা ভয় পেয়ে একে একে দরজা খুলে নেমে পড়ি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গাড়ি জ্বলতে শুরু করে।” এই ভয়ানক অভিজ্ঞতার পর যাত্রীরা এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। চিকিৎসা না লাগলেও তাঁদের মানসিকভাবে স্থিতিশীল করতে পুলিশ কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছে।
জাতীয় সড়কে যানজট, তৎপর পুলিশ
দুর্ঘটনার ফলে কোলাঘাটমুখী লেনে বেশ কিছু সময় ব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। বহু গাড়ি থেমে যায়, চালকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তবে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পথচলতি মানুষদের সুরক্ষার জন্য ঘটনাস্থলে কিছু সময় পর্যন্ত ব্যারিকেডও বসানো হয়।
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন: বার বার দুর্ঘটনা ১৬ নম্বর সড়কে!
এই সড়ক, অর্থাৎ NH-16, আগেও বহুবার দুর্ঘটনার জন্য চর্চায় এসেছে। এক মাস আগেই এই রাস্তায় ২২টি ‘ব্ল্যাকস্পট জ়োন’ চিহ্নিত করে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবুও এই ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রশ্ন তোলে—নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গাড়িতে আগুন লাগার মতো ঘটনা কখনও কখনও পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটে। কিন্তু সময়মতো সতর্ক হলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়—এটাই তার প্রমাণ।”
বরাত জোরে প্রাণে বাঁচলেন যাত্রীরা, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়
এই ঘটনায় সৌভাগ্যবশত কেউ আহত হননি। তবে মুহূর্তের ভুল বা ত্রুটির কারণে প্রাণনাশ হতে পারত—এমনই মত স্থানীয়দের।
আবারও প্রমাণিত, দ্রুত সিদ্ধান্ত, সতর্কতা ও স্থানীয়দের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। তবে ভবিষ্যতে এই জাতীয় ঘটনা রুখতে আরও কড়া নজরদারি, সচেতনতা এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তারা।