Digha Jagannath Tample : আষাঢ় মাসের শুরুর দিক। ক্যালেন্ডারে দিন গুনছেন হাজার হাজার ভক্ত ও পর্যটক। কারণ একটাই—দিঘার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ রথযাত্রা। তবে তার আগেই এল এক নিয়মরক্ষার সিদ্ধান্ত—১৫ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে জগন্নাথদেবের দর্শন।
১২ জুনের স্নানযাত্রার পর থেকে মূল মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ যেন দেবতার ‘স্বেচ্ছা নির্জনবাস’। আর এই সময়ে জগন্নাথ মূর্তির সামনে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
কোন কোন তারিখে কী কী হচ্ছে?
দিঘা জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী—
-
১২ জুন: স্নানযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনই দেবতাদের স্নান করানো হয় ১০৮টি কলসির পবিত্র জলে। এরপরই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে মনে করা হয়।
-
২৬ জুন: নবযৌবন ও নেত্র উৎসব—যেখানে দেবতাকে আবার নতুন রূপে দর্শন করানো হয়।
-
২৭ জুন: আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হবে মহা রথযাত্রা উৎসব।
দর্শন বন্ধ কেন? ব্যাখ্যা করলেন ইসকনের সহ-সভাপতি
ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমন দাস জানিয়েছেন— “স্নানযাত্রার পর দেবতাদের শরীর অসুস্থ হয়। তাই এই ১৫ দিন তিনি বিশ্রামে থাকেন, দর্শনার্থীদের অন্তরালে। অনেকটা কোভিডের সময় যেমন কোয়ারেন্টাইন হতেন, তেমনই। এই সময় ভোগও বন্ধ থাকে।” এই ‘অন্তর্নয়ণ’ কেবল দেহগত বিশ্রামের প্রতীক নয়, এটি এক পবিত্র আচার যা বছরের পর বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে পুরী ও অন্যান্য জগন্নাথ মন্দিরে।
কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছে দিঘা?
দিঘার থানা লাগোয়া পুরনো মন্দিরটিকে ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবে সাজানো হচ্ছে। সেখানেই সাতদিন থাকবে রথ।
৭৫ লক্ষ টাকার প্রকল্পে পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রায় শেষ। মাসির বাড়িতে থাকবে নিম কাঠের মূর্তি, আর মূল মন্দিরে থাকবে পাথরের বিগ্রহ। দু’জায়গাতেই চলবে পূজা-পাঠ, প্রসাদ বিতরণ, এবং নানা অনুষ্ঠান। রথযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
কোন পথে যাবে রথ? গেট নির্ধারণ নিয়ে বৈঠক ১০ জুন
দিঘা জগন্নাথ মন্দিরে রয়েছে ৮টি গেট। তবে কোন গেট দিয়ে রথ বাহির হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এই বিষয়টি নিয়ে ১০ জুন আরও একটি প্রশাসনিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, বৃষ্টি হলে যাতে কাদা ও জল জমে না থাকে, তার জন্য নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিড় সামলাতে ইতিমধ্যেই রুটম্যাপ, স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন ও মাইকিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
৪০ লক্ষ দর্শনার্থী! আরও কী বাড়তে চলেছে?
জগন্নাথ ধাম কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ মন্দির দর্শনে এসেছেন।
রথযাত্রার দিন গুলিতে সেই সংখ্যাটা আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য থাকবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানীয় জলের ট্যাঙ্ক, শৌচালয় ও বাসস্ট্যান্ডে অতিরিক্ত কর্মী।
মুখ্যমন্ত্রী আসছেন উদ্বোধনে!
চলতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধনে থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। যদিও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়, তবে প্রশাসনিক সূত্র বলছে, রথের দিন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
রথ মানেই উৎসব, ভক্তি, বৃষ্টি আর বিশ্বাস
দিঘা শুধু সমুদ্র নয়, এখন জগন্নাথধাম হিসেবেও ভক্তদের তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। রথযাত্রা ঘিরে স্থানীয় হোটেল, দোকান, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসারও দেখা যাচ্ছে বড়সড় গতি। এ যেন ভক্তি আর পর্যটনের মেলবন্ধন। আর সেই সঙ্গে রয়েছে বাঙালির আবেগ—‘রথ মানেই বৃষ্টি হবে’, রথ মানেই মিলবে মহাপ্রসাদ, রথ মানেই কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে ভক্তিরসে ডুব দেওয়ার সময়।