Delhi : ভারতের রাজধানী দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (IGIA) ফের উঠে এল শিরোনামে। তবে এবার কোনও রেকর্ড যাত্রীর ভিড় বা নিরাপত্তা ইস্যু নয়, বরং এক বড়সড় সিদ্ধান্তের কারণে আগামী তিন মাসে একটানা বাতিল হতে চলেছে প্রতিদিন ১১৪টি ফ্লাইট।
রানওয়ে সংস্কারেই তিন মাসের গোলযোগ
দিল্লি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে আগামী তিন মাস ধরে চলবে রানওয়ে আপগ্রেডেশন বা সংস্কারের কাজ। এতে ব্যাহত হবে বিমান ওঠা-নামার স্বাভাবিক ছন্দ। ফলে সকাল থেকে রাত অবধি নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিতভাবে বাতিল করা হবে একাধিক উড়ান। বর্তমানে দিল্লি বিমানবন্দরে রয়েছে তিনটি রানওয়ে। এই তিনটির মধ্যে একটি রানওয়ের কাজ চলাকালীন বাকিগুলি দিয়ে পুরো ট্রাফিক সামলানো সম্ভব নয়। ফলে ঘন্টায় নির্দিষ্ট ফ্লাইট সংখ্যা পরিচালনার সক্ষমতা কমে যাবে প্রায় ৩০ শতাংশ।
যাত্রীদের জন্য বাড়ছে ভোগান্তি
দিল্লি বিমানবন্দর দেশের মধ্যে অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৪০০টির বেশি উড়ান ওঠানামা করে। যাত্রীসংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ২ লক্ষেরও বেশি। এর মধ্যেই যদি প্রতিদিন ১১৪টি করে উড়ান বাতিল হয়, তাহলে আগামী তিন মাসে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল হতে চলেছে!
এই বাতিলের জেরে বহু যাত্রীর ভ্রমণ পরিকল্পনায় ধস নামতে পারে। বিশেষ করে, যারা ব্যবসায়িক সফর কিংবা ট্রানজিট হিসেবে দিল্লিকে ব্যবহার করেন, তাঁদের পড়তে হবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায়।
কোন কোন এয়ারলাইন্স প্রভাবিত?
এই সময়কালে যেসব এয়ারলাইন্স সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে চলেছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
-
ইন্ডিগো (IndiGo): যাদের দিল্লি থেকে গড়ে দিনে ৫০০-এর বেশি ফ্লাইট থাকে।
-
এয়ার ইন্ডিয়া: আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া দু’টি ক্ষেত্রেই অনেক রুটে কাটছাঁট হবে।
-
ভিস্তারা ও স্পাইসজেট: কিছু নির্দিষ্ট টাইম স্লটেই বড়সড় পরিবর্তন আসছে।
এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই যাত্রীদের মেসেজ পাঠিয়ে সম্ভাব্য রি-শিডিউল বা রিফান্ডের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
কোন সময়ে সবচেয়ে বেশি কাটা পড়ছে ফ্লাইট?
সূত্র বলছে, সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে। এই সময়টি সাধারণত সর্বোচ্চ চাপের সময়। রানওয়ে কম থাকলে, তখনই বিমান ওঠা-নামার গতি সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়।
ট্রাভেল এজেন্ট ও পর্যটন শিল্পে প্রভাব
এই বিপুল পরিমাণ ফ্লাইট বাতিলের প্রভাব পড়বে ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর এবং হোটেল শিল্পেও। বিশেষ করে যারা দিল্লিকে কেন্দ্র করে উত্তর ভারত বা হিমালয়গামী পর্যটকদের গন্তব্য বানান, তাঁদের ক্ষতি হতে পারে লক্ষ লক্ষ টাকার।
বিকল্প কী?
দিল্লি ছাড়াও আশেপাশে কয়েকটি বিকল্প বিমানবন্দর রয়েছে—যেমন জয়পুর, লখনউ, চণ্ডীগড়, দেরাদুন—কিন্তু এত বিশাল যাত্রীসংখ্যা এই এয়ারপোর্টগুলি সামলাতে পারবে না। ফলে বিকল্প পথ হিসেবে অনেকে রেল বা রোড ট্রান্সপোর্টের দিকেও ঝুঁকছেন।
উল্লেখ্য, একদিকে পরিকাঠামো উন্নয়ন, অন্যদিকে ভোগান্তি—এই টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে চলবে দিল্লি বিমানবন্দরের আগামী তিন মাস। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, এই কাজ শেষ হলে ভবিষ্যতে আরও দ্রুত ও নিরাপদ হবে বিমান চলাচল। কিন্তু ততদিন, বিমানযাত্রীদের জন্য দিল্লির আকাশ যেন কিছুটা ‘বাধাগ্রস্ত’ই।