AK-47 : কাশ্মীর সীমান্তে যেন যুদ্ধের আবহ। গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে গ্রামের পর গ্রাম। অথচ সেনাবাহিনী নয়, এবার রাইফেল কাঁধে তুলে নিচ্ছেন গ্রামের মানুষই! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন—বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF) এখন অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সীমান্তবর্তী গ্রামের সাধারণ মানুষদের।
কীসের প্রশিক্ষণ, কারা পাচ্ছেন?
একে-৪৭, ইনসাস রাইফেল চালানো, হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া, এমনকি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও BSF-এর পোস্টে তা জানানো—সবই শেখানো হচ্ছে এই প্রশিক্ষণে। মূলত তরুণরাই এই ট্রেনিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। তবে বাদ যাচ্ছেন না তরুণী কিংবা কিশোর-কিশোরীরাও। যদিও তাদের জন্য মূলত আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন
কয়েকদিন আগেই পহেলগামে ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে ধর্ম বেছে বেছে খুন করে জঙ্গিরা। তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়েই তারা কাশ্মীরে ঢুকেছিল। এই ঘটনার পরই ভারত চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ধ্বংস করা হয় একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি। এবার নতুন পর্ব—সীমান্তবাসীদের হাতে অস্ত্র।
‘ভিলেজ ডিফেন্স গার্ড’ গড়ে তুলতে তৎপর BSF
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ভিলেজ ডিফেন্স গার্ড’ নামক এক বিশেষ কর্মসূচির অধীনে এই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই—সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশ, ড্রোনে করে অস্ত্র চোরাচালান বা মাদক পাচার রুখতে সাধারণ মানুষকেও সক্রিয় করা। এছাড়াও, যাতে হঠাৎ হামলার সময় গ্রামবাসীরা আতঙ্কে না ভেঙে পড়েন, মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেই মানসিক প্রস্তুতিরও ট্রেনিং চলছে।
মহিলারাও পাচ্ছেন আত্মরক্ষার শিক্ষা
জম্মু ও কাশ্মীরের কয়েকটি এলাকায় মহিলা ও কিশোরীদেরও আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন BSF জওয়ানরা। মার্শাল আর্ট, হাতের চালে প্রতিরোধ, ঘন ঘন ড্রোন নজরদারির কৌশল শেখানো হচ্ছে।
কী বলছেন BSF?
BSF-এর এক কর্তা জানিয়েছেন, “তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দেখে আমরা অভিভূত। সীমান্তের গ্রামের BSF পোস্টে বহু মানুষ রোজই এসে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। চোরাচালান রুখতে এবং নিরাপত্তার নজরদারিতে গ্রামের মানুষরাই আমাদের তুরুপের তাস হয়ে উঠবেন।”
এই উদ্যোগের নেপথ্যে কী বার্তা?
জম্মু-কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি অনুপ্রবেশ, সীমান্ত চোরাচালান এবং পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের শিকার। এই পরিস্থিতিতে শুধু সেনা বা পুলিশ নয়, সাধারণ মানুষেরও সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের মতে, স্থানীয়দের যুক্ত করলে সীমান্ত নিরাপত্তা আরও মজবুত হবে।
উল্লেখ্য, একদিকে সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে সীমান্ত পেরিয়ে, অন্যদিকে সীমান্তবাসীর হাতে উঠছে রাইফেল—এই যুগলবন্দি হয়তো কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই আগুনখেলা কতটা নিরাপদ? সময়ই দেবে তার জবাব।