Sodepur : ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় খড়দার এক তরুণীর সঙ্গে ডোমজুড়ের বাসিন্দা আরিয়ান খানের। তরুণী চাকরি খুঁজছিলেন, তখনই আরিয়ানের তরফে আসে একটি লোভনীয় প্রস্তাব। বলা হয়, এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে তাঁর জন্য কাজ রয়েছে। স্বপ্ন দেখেছিলেন র্যাম্পে হাঁটার, মঞ্চে কাজের। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল, তা যেন কোনও দুঃস্বপ্নের থেকেও ভয়ঙ্কর।
চাকরির নামে প্রতারণা, শুরু ফাঁদে ফেলা
তরুণীকে ডেকে আনা হয় ডোমজুড়ে। আরিয়ান ও তাঁর মা মিলে জানান, একটি “ইভেন্ট”-এ তাঁকে অংশ নিতে হবে। কিন্তু তরুণী জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে বুঝতে পারেন যে এটি কোনও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা নয়, বরং একটি পানশালা, যেখানে তাঁকে নাচতে বলা হয়। যখন তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হননি, তখনই শুরু হয় অত্যাচার।
অমানবিক নির্যাতন: চুল কেটে নেওয়া, সিগারেটের ছ্যাঁকা, কাটারি
তরুণীর অভিযোগ, রাজি না হওয়ায় আরিয়ান ও তাঁর মা তাঁকে বাড়িতে আটকে রাখেন। দিনের পর দিন চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কখনও দেওয়া হয় সিগারেটের ছ্যাঁকা, কখনও গায়ে চালানো হয় কাটারি। এমনকি এক পর্যায়ে তাঁর মাথার চুল কেটে নেওয়া হয় — যেন আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি ভেঙে ফেলা যায়।
পালিয়ে বাঁচা, পুলিশের দ্বারস্থ পরিবার
অবশেষে গতকাল কোনওরকমে ডোমজুড়ের ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের খড়দার বাড়িতে ফিরে আসেন তরুণী। পরিবারের লোকজন তাঁকে দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে খড়দা থানায় দায়ের করা হয় অভিযোগ।
তরুণীর মায়ের দাবি, “আমার মেয়েকে শারীরিকভাবে নিংড়ে নেওয়া হয়েছে। ওর শরীরে একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন, জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা, চুল নেই মাথায়। এই কী সভ্য সমাজ?”
পুলিশের তদন্ত শুরু, গ্রেপ্তারি হতে পারে দ্রুত
খড়দা থানার পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে আরিয়ান ও তাঁর মা পলাতক বলেই জানা গিয়েছে। তবে সূত্রের খবর, দ্রুত তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, “ঘটনাটি গুরুতর। তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে
এই ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠছে সোশাল মিডিয়া সংক্রান্ত নিরাপত্তা এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার নামে প্রতারণার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাকরির নামে নারীদের টার্গেট করে এরকম ফাঁদ নতুন নয়। তবে এই ঘটনার হিংস্রতা সমাজকে আরও একবার নাড়িয়ে দিয়েছে।
একটি স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে যে ভয়াবহতার মধ্যে দিয়ে যেতে হল এক তরুণীকে, তা আমাদের সকলকে সতর্ক করে দেয়। সোশাল মিডিয়া হোক বা চাকরির অফার — সাবধানতা যে কতটা জরুরি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ডোমজুড়ের এই ঘটনা।