Brain Tumor : বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবসে রুবি জেনারেল হাসপাতালের নিউরোসার্জেন ডা. বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত এবং পিয়ারলেস হাসপাতালের নিউরোসার্জেন ডা. প্রসাদ কৃষ্ণন এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন—ব্রেন টিউমার মানেই মৃত্যু নয়। তবে সময়মতো উপসর্গ চেনা আর চিকিৎসা শুরু করাই হতে পারে জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি।
ব্রেন টিউমার মানেই কি মৃত্যু?
প্রথমেই এই ভয় ভাঙালেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, সমস্ত ব্রেন টিউমার ক্যান্সারাস হয় না। আবার ক্যান্সারাস হলেও আধুনিক চিকিৎসায় অনেকাংশেই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে একটাই শর্ত—তাড়াতাড়ি ধরা পড়া।
ডা. সেনগুপ্ত স্পষ্ট করে বললেন,“সমস্যা হল, বেশিরভাগ মানুষ উপসর্গগুলিকে গুরুত্ব দেন না। অনেক সময় অন্য সমস্যার চিকিৎসা করতে গিয়ে আচমকা ধরা পড়ে ব্রেন টিউমার।”
কোন ধরনের মাথাব্যথা ‘রেড অ্যালার্ট’?
সব মাথাব্যথাই কিন্তু টিউমারের লক্ষণ নয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে—
- যদি সকালে ঘুম ভেঙেই মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়,
- তার সঙ্গে থাকে বমি, যা হলে কিছুটা স্বস্তি মেলে,
- মাথাব্যথা হয় পুরো মাথা জুড়ে,
- আর কোনো পেনকিলার কাজ না করে
এই উপসর্গগুলো বারবার ঘটলে দ্রুত নিউরোসার্জেনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন,“মাথাব্যথার পাশাপাশি চোখে ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন, অজ্ঞান হওয়া, খিঁচুনি হওয়া, মেজাজ পরিবর্তন, কথা জড়িয়ে যাওয়া, ভুলে যাওয়া—এই লক্ষণগুলোও হতে পারে ব্রেন টিউমারের ইঙ্গিত।”
উপসর্গ নির্ভর করে কোথায় টিউমার, তার উপর
ডা. প্রসাদ কৃষ্ণনের মতে, ব্রেন টিউমার কোথায় আছে, তার উপর নির্ভর করে কী উপসর্গ দেখা দেবে। যেমন—
- কথার অংশে টিউমার থাকলে কথা বলায় সমস্যা,
- চলাফেরার অংশে টিউমার থাকলে হঠাৎ ভারসাম্য হারানো বা দিকভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া,
- দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণের অংশে হলে চোখে ঝাপসা দেখা বা অন্ধত্ব,
- তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, যেসব টিউমার ব্রেনের ‘নিরব’ অংশে হয়, সেগুলো প্রথমে তেমন উপসর্গ দেয় না। ধরা পড়ে দেরিতে।
ক্যান্সারাস নয়, এমন টিউমারও মারাত্মক হতে পারে!
নন-ক্যান্সারাস টিউমারও মস্তিষ্কে চাপ ফেলে মারাত্মক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে একসময় শরীরের একাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে, হাত থেকে জিনিস পড়ে যায়, খিঁচুনি শুরু হয়। এই ধরনের উপসর্গকে অবহেলা করলে বড় বিপদ আসতে পারে।
চিকিৎসা কি সম্ভব?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ব্রেন টিউমার মানেই মৃত্যু নয়। সময়মতো ধরা পড়লে ও চিকিৎসা শুরু হলে পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। আধুনিক চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে সাফল্যের হার অনেক বেড়েছে। তবে তা নির্ভর করছে—রোগী কত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে এলেন, টিউমার কোথায় আছে ও কতটা ছড়িয়েছে তার উপর।
সতর্ক হোন, আতঙ্ক নয়
চিকিৎসকরা বারবার বলছেন—সব মাথাব্যথা বা খিঁচুনি মানেই ব্রেন টিউমার নয়। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ যদি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অন্তত একটি সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করিয়ে নিলে সমস্যার গোড়াতেই ধরা সম্ভব।
উল্লেখ্য, আজকের দিনে, ব্রেন টিউমার মানেই আর মৃত্যু নয়। সময়মতো সচেতন হলেই আপনি নিজে বা আপনার প্রিয়জনকে বাঁচাতে পারবেন এই নীরব ঘাতকের হাত থেকে। উপসর্গ চিনুন, ভয় নয়, সিদ্ধান্ত নিন সঠিক সময়েই।