Giridhar Rajagopalan : একদিকে দেশের প্রথম গঙ্গার তলদেশে নির্মিত মেট্রো সুরঙ্গ, অন্যদিকে বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতু—চেনাব ব্রিজ। দুটি প্রকল্পই ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ইতিহাসে মাইলফলক। অথচ এই দুই ঐতিহাসিক কীর্তির পেছনে আছেন এক মানুষ। গিরিধর রাজাগোপালন—পরিকাঠামো নির্মাণের জগতে এক নিরব নায়ক। তার হাত ধরেই ‘অসম্ভব’ শব্দটা ‘সম্ভব’-এ পরিণত হয়েছে।
শুরুটা গঙ্গার তলদেশে
২০২৩ সালের মার্চে কলকাতাবাসী ইতিহাসের সাক্ষী হন। হাওড়া ও শিয়ালদহের মধ্যে তৈরি হয় দেশের প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত মেট্রো সুরঙ্গ। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই টানেল ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ—গঙ্গার প্রবল স্রোত, পুরনো শহরের নরম মাটি, ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সবকিছুকে জয় করে তৈরি হয় এই অসাধারণ প্রকল্প। আর এই দুঃসাহসিক অভিযানের রণনায়ক ছিলেন AFCONS-এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর গিরিধর রাজাগোপালন।
পরের চ্যালেঞ্জ: আকাশছোঁয়া চেনাব ব্রিজ
কলকাতার মেট্রো প্রজেক্ট সফল হতেই তিনি মুখোমুখি হন আরও এক দুর্ধর্ষ অভিযানের—কাশ্মীর উপত্যকায় চেনাব নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ। ৩৫৯ মিটার উঁচু এই সেতু বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলব্রিজ হিসেবে রেকর্ড গড়েছে। প্রকল্পটি ছিল অতি দুর্গম এলাকায়, যেখানে ভূমিকম্প, তুষারঝড় ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ছিল নিত্যসঙ্গী। তবুও ৪৩ বছরের নির্মাণ-অভিজ্ঞতা ও অদম্য আত্মবিশ্বাসে সেই অসাধ্যকে সাধন করলেন গিরিধর।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সুরক্ষা
চেনাব ব্রিজ নির্মাণে এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে, যা বিস্ফোরণ, ভূমিকম্প এমনকি ঘণ্টায় ১৮০ কিমি বেগে ঝড়ও সহ্য করতে সক্ষম। শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক মানের প্রকৌশল কৌশলে নির্মিত এই সেতু ভারতীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দুটি প্রকল্পই সফলভাবে পরিচালনা করেছে AFCONS Infrastructure Ltd, যেখানে গিরিধর রাজাগোপালন শীর্ষস্থানীয় পদে রয়েছেন।
নায়কের নিজস্ব বক্তব্য
এই নিরব নায়ক বলছেন, “চ্যালেঞ্জ যত বড়ই হোক, আমাদের কাজের প্রতি উৎসাহ ততটাই বেশি থাকে। গঙ্গার তলা দিয়ে টানেল যেমন একটি বড় কাজ ছিল, তেমনি চেনাব ব্রিজ ছিল আমার পেশাগত জীবনের অন্যতম সেরা চ্যালেঞ্জ।”
এক নিঃশব্দ বিপ্লব
ভারতের পরিকাঠামো খাতে যখন আমরা প্রায়শই বিদেশি সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলি, তখন গিরিধর রাজাগোপালনের মতো মানুষের কথা উঠে আসে না। অথচ তাঁর মতই কিছু মানুষ নিঃশব্দে ভারতের উন্নয়নের ভিত গড়ে তোলেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, পরিকাঠামো উন্নয়ন মানেই শুধু বড় বাজেট নয়—তার পেছনে থাকতে হয় বড় স্বপ্ন, অদম্য সাহস এবং নিরব অধ্যবসায়।