Hospital Billing Scam : বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অতিরিক্ত বিলের বোঝা রোগী ও তাদের পরিবারের কাছে নতুন কিছু নয়। বরং চিকিৎসার শেষে যখন মূল প্যাকেজের বাইরে আলাদা করে অজস্র খরচের হিসাব আসে, তখন রোগী পরিবার যেন দ্বিতীয়বার ধাক্কা খায়। এই পরিস্থিতি বদলাতেই রাজ্য সরকার এবার কড়া পথে হাঁটছে।
চলতি বিধানসভা অধিবেশনেই রাজ্য সরকার পেশ করতে চলেছে Clinical Establishment Act-এ সংশোধনী বিল। সূত্রের খবর, এবার থেকে প্যাকেজ চুক্তির বাইরে কোনও খরচ চাপালে সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরাসরি নেওয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
কী ধরনের বিল নিয়ে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি?
পশ্চিমবঙ্গের বহু বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজের কথা বলা হয়। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন বা ছাড়পত্রের সময় সেই প্যাকেজের বাইরেও নানা খাতে বিপুল অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। অধিকাংশ অভিযোগ থাকে—
- অতিরিক্ত শয্যা ভাড়া
- ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্য
- ব্যবহৃত হয়নি এমন যন্ত্রপাতির চার্জ
- ICU বা HDU-এর নাম করে অতিরিক্ত দিন হিসাব
এই সমস্যাগুলোর দিকেই এবার কড়া নজর দিতে চলেছে রাজ্য সরকার।
সংশোধনীতে কী কী থাকছে?
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী—
1. চিকিৎসা শুরু হওয়ার সময়ই পুরো বিলের একটি প্রাথমিক কাঠামো দিতে হবে হাসপাতালকে।
2. চিকিৎসা চলাকালীন প্যাকেজ ছাড়িয়ে গেলে লিখিত সম্মতি নিতে হবে রোগীর পরিবারের।
3. অতিরিক্ত খরচের বিশদ খতিয়ান ও যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দিতে হবে।
4. অভিযোগ প্রমাণিত হলে, হাসপাতালের বিরুদ্ধে জরিমানা ও লাইসেন্স স্থগিতের ব্যবস্থা থাকছে।
রোগীর পরিবার পাবে ন্যায়?
বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু হাই-প্রোফাইল বেসরকারি হাসপাতালকে নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বহু পরিবারের সদস্য। বহু মামলাও চলছে আদালতে।
এই পরিস্থিতিতে যদি সংশোধনী আইন বাস্তবায়িত হয় এবং প্রশাসন সত্যিই সক্রিয় হয়, তবে নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি হাসপাতালের অপ্রয়োজনীয় বিল চাপানোর প্রবণতাও অনেকটা কমবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্যভিজ্ঞ মহল।
রাজনীতির রঙ লাগছে কি?
তবে একাংশ মনে করছে, এই সংশোধনীর পিছনে রয়েছে আসন্ন নির্বাচনের রাজনীতি। সরকারের বিরুদ্ধে ‘গরিব-বিরোধী’ ট্যাগ মুছতে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবু বাস্তবায়নটাই শেষ কথা—বিল পাস হলেই সব বদলে যাবে এমন নয়।
যদি এই সংশোধনী সত্যি কার্যকর হয় এবং কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তবে চিকিৎসা খরচ নিয়ে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হবে। এখন দেখার, এই বিল শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে না কি বাস্তবেই বেসরকারি চিকিৎসাক্ষেত্রে আনে স্বচ্ছতা।