Indian Railway : মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই মুম্বইয়ের শহরতলিতে ভিড়ের চাপে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয় চারজন যাত্রীর। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। সেই মর্মান্তিক ঘটনার পরপরই ভারতীয় রেল বোর্ড তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়—নতুন ডিজ়াইনে তৈরি হবে লোকাল ট্রেন, যাতে আর কোনও প্রাণ না যায় অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিতে।
কী থাকছে নতুন ডিজাইনে?
রেলের রোলিং স্টক বিভাগ জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরেই তৈরি হয়ে যাবে এই ‘নন-এসি লোকাল ট্রেন’ যার মূল আকর্ষণ—স্বয়ংক্রিয় স্লাইডিং দরজা। ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানোর পর দরজা খুলবে এবং যাত্রীরা ওঠা-নামা সেরে নেওয়ার পরই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, একেবারে মেট্রোর মতো। চলন্ত অবস্থায় আর খোলা দরজা নয়, ফলে হুড়োহুড়ির সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেক কমবে।
তবে দরজা বন্ধ মানেই দমবন্ধ করা যাত্রা নয়। প্রতি কামরার ছাদে বসানো হবে ভেন্টিলেশন ইউনিট, যা বাইরে থেকে শুদ্ধ বাতাস টেনে এনে পাম্প করে ভিতরে ছড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি এক কামরা থেকে অন্য কামরায় যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে ভেস্টিবিউলের মাধ্যমে।
শিয়ালদহেও আসছে কি এই পরিষেবা?
প্রাথমিক ভাবে এই বিশেষ লোকাল ট্রেন চালু হবে মুম্বইয়ের শহরতলিতে। তবে পূর্ব রেলের একাধিক শাখা—শিয়ালদহ-নৈহাটি, শিয়ালদহ-বনগাঁ, সোনারপুর-ক্যানিং ও বারুইপুর-নামখানা রুটে যাত্রীদের চাপ মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে এই ট্রেন কলকাতা মেট্রো রিজিয়নেও চালু হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে রেল সূত্রে।
প্রতিদিন শিয়ালদহ ডিভিশনের লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন ১৪-১৫ লক্ষ মানুষ। বাদুড়ঝোলা ভিড়ে কোথাও পা রাখার জায়গা থাকে না। ফলে এই আধুনিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেই মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু কিছু সমস্যা রয়েই যাচ্ছে
স্বয়ংক্রিয় দরজা চালু করা মানেই যেন সব সমস্যার সমাধান—তা নয়। মেট্রোয় যেমন সামান্য বাধাতেই দরজা বন্ধ হয় না, লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও সেই সেন্সিটিভিটি চালু করলে চলবে না। কারণ স্টপেজে সময় কম, আর যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। এইসব দিক মাথায় রেখেই রেল ডিজ়াইন চূড়ান্ত করছে বলে জানিয়েছেন রেল ইঞ্জিনিয়াররা।
জনস্বার্থে রেলের দ্রুত সিদ্ধান্ত
সাধারণত এই ধরনের পরিবর্তন চালু হতে সময় লাগে অনেক। কিন্তু মৃত্যুর ঘটনার পর সাধারণ মানুষের উদ্বেগ এবং সামাজিক চাপে রেল এক প্রকার বাধ্য হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। এমনকি পূর্বে চলমান লোকাল ট্রেনেও ভবিষ্যতে রেট্রোফিটিং-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় দরজা বসানো হতে পারে।
রেলের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। কারণ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবিকার জন্য লোকাল ট্রেনে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। এমন প্রযুক্তি প্রয়োগ যদি জীবন বাঁচায়, তবে সেটাই হোক নতুন যুগের সূচনা।
উল্লেখ্য, একটি দুর্ঘটনা গোটা দেশের লোকাল ট্রেন ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করল। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার আর মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ভারতীয় রেলের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের যাত্রাকে আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক করে তুলবে বলেই আশা।