Crime News : কর্নাটকের হাসান জেলায় ঘটল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বছর তেত্রিশের এক গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ, অভিযোগ—তিনি তাঁর স্বামী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। কারণ? তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যেতে পারে—এই আতঙ্কেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেন ওই মহিলা। পুলিশের তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ঘটনার সূত্রপাত একটি সম্পর্কে
অভিযুক্ত চৈত্রা, যাঁর সঙ্গে ১১ বছর আগে বিয়ে হয় হাসানের বাসিন্দা গজেন্দ্রর। তাঁদের দুটি সন্তানও রয়েছে। তবে গত তিন বছর ধরে তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরে। গজেন্দ্রর দাবি অনুযায়ী, চৈত্রা প্রথমে এক পুনীত নামের ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে চৈত্রার বাবা-মায়ের কাছে অভিযোগ করেন। মধ্যস্থতার পর সে যাত্রা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও, চৈত্রা আবারও এক শিবু নামে যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান বলে অভিযোগ।
পরিবার শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা
পুলিশ জানিয়েছে, শিবুর সঙ্গে মিলে পরিবারের সবাইকে গোপনে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়ার ছক কষেছিলেন চৈত্রা। খাবারে নিয়মিতভাবে মেশাতে শুরু করেন ঘুমের ওষুধ। বিষয়টি গজেন্দ্রর সন্দেহের উদ্রেক করে। তিনিই প্রথম পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে জেরায় চৈত্রা স্বীকার করেন, প্রেমিক শিবুর পরামর্শেই এই কাজ করেছিলেন তিনি। যদিও পুরো পরিকল্পনা সফল হওয়ার আগেই ফাঁস হয়ে যায় ষড়যন্ত্র।
সতর্ক স্বামী, প্রাণে বাঁচল পরিবার
গজেন্দ্র জানান, সম্প্রতি তিনি পরিবারের খাবারে অস্বাভাবিক ঘুমের প্রভাব লক্ষ্য করেন। তাঁর সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়, যখন তিনি স্ত্রী চৈত্রার আচরণে অসঙ্গতি লক্ষ্য করেন। এরপরই তিনি পুলিশে যান। পুলিশ এসে চৈত্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শেষপর্যন্ত উঠে আসে ভয়ঙ্কর এই ষড়যন্ত্রের চিত্র।
তদন্তে নামল পুলিশ, খোঁজ চলছে প্রেমিকের
পুলিশ সূত্রের খবর, এখনো পর্যন্ত চৈত্রা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে শিবু নামে যে যুবক এই ছক কষতে সাহায্য করেছিল, তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। এছাড়া চৈত্রার মোবাইল ফোন, চ্যাট হিস্ট্রি, কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ মনে করছে, এই ষড়যন্ত্রে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে।
মানসিক অবস্থা ও প্ররোচনার প্রশ্ন
এই ঘটনায় উঠছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। একজন মা কীভাবে নিজের সন্তানদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মারার কথা ভাবতে পারেন? চৈত্রার মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য মনোবিদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, প্রেমিক শিবু কতটা প্ররোচনা দিয়েছিলেন এই কাজের জন্য? এই ঘটনা শুধু পারিবারিক সম্পর্কের ভাঙন নয়, সমাজের গভীরে চাপা পড়ে থাকা নৈতিক অবক্ষয়ের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি বলেই মনে করছেন সমাজবিদরা।
সতর্ক না হলে কী হতে পারত!
ধরে নেওয়া যাক, গজেন্দ্র যদি একটু দেরি করতেন, বা সন্দেহ না করতেন, তাহলে কী হতে পারত? হয়তো একসঙ্গে প্রাণ হারাতে হতো গোটা পরিবারকে। এমন ঘটনাগুলি আমাদের শেখায়—সম্পর্কে ফাটল ধরলে, তার মোকাবিলা হতে পারে আইনি বা পারিবারিক পথে, কিন্তু হিংসা, প্রতিহিংসা বা ছলনার পথ বেছে নেওয়া কোনও সমাধান নয়। এই ঘটনাটি কেবল একটি পরিবারের নয়, সমাজের চোখে বড় এক শিক্ষা, এক সতর্ক সংকেত।

