Notam : মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। ইরান ও ইজ়রায়েলের মধ্যে চলতে থাকা চাপানউতোরের মাঝেই বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল ইরান। নিরাপত্তার কারণে তারা জারি করেছে ‘নোটাম’ বা নোটিস টু এয়ার মিশন। এর অর্থ, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আকাশপথে কোনও বিমান উড়ে যেতে পারবে না।
এই সিদ্ধান্তে শুধুই যে ইজ়রায়েল নয়, বিপাকে পড়েছে একাধিক দেশ, বিশেষত ভারত। কারণ পাকিস্তানের আকাশ ভারতের জন্য এখনও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। ফলে পশ্চিমমুখী বিমানগুলির জন্য ইরানের আকাশপথ ছিল একমাত্র নির্ভরযোগ্য রুট।
মাঝ আকাশে ঘুরে ফিরে এল ফ্লাইট
ইরানের এই নোটামের জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য। দিল্লি থেকে লন্ডনের পথে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটকে মাঝ আকাশ থেকেই মুম্বই ফিরিয়ে আনতে হয়। একই পরিণতি হয়েছে দিল্লি-ভিয়েনা এবং মুম্বই-নিউ ইয়র্ক রুটের ফ্লাইটগুলিরও।
অনেক যাত্রীরই অভিযোগ, তারা বোর্ডিংয়ের পর একপ্রকার মাঝপথেই জানতে পারেন বিমান গন্তব্যে পৌঁছাবে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয়েছে অনেককে। ছোট ছোট শিশুরা, বয়স্ক যাত্রী—সবাইকে পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি।
বিকল্প রুটের খোঁজে দিল্লি
এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি এখন চোখ রেখে চলছে ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের দিকে। যদি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, তবে বিকল্প আকাশপথ খুঁজতেই হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরেও তাদের আকাশ ভারতের জন্য এখনও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দিক ঘুরে আফ্রিকা হয়ে পশ্চিমে পৌঁছনোর বিকল্প পথ ভাবা হচ্ছে। তবে এতে সময় যেমন বাড়বে, তেমনই খরচও বাড়বে বিমানের। তার প্রভাব পড়বে টিকিটের দামে। সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, দীর্ঘ উড়ানে যাত্রীদের কষ্টও বেড়ে যাবে।
পশ্চিমের রুটে একঘেঁয়ে চাপ
প্রসঙ্গত, ইরান-পাকিস্তান—দু’টি রুটই বন্ধ থাকায় পশ্চিমমুখী যাবতীয় উড়ান এখন একটিমাত্র বিকল্প রুটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে আকাশপথে চাপ বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।
উল্লেখযোগ্য যে, আন্তর্জাতিক উড়ানগুলির মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু থেকে ছাড়া ফ্লাইটগুলিতে। কারণ সেখান থেকেই সরাসরি ইউরোপ ও আমেরিকাগামী বিমান ছাড়ে।
নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল
এই ঘটনার প্রভাব শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বের উপর পড়ছে। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থা IATA-এর তরফ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং বিমান সংস্থাগুলিকে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ভারত সরকারও কড়া নজর রাখছে। দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। যাত্রীদের স্বার্থে সমস্ত সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যাত্রীদের অনিশ্চয়তা
বিমানে ওঠার পর কেউই চায় না হঠাৎ ফিরে আসতে। কিন্তু ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের এই অচলাবস্থায় যাত্রীদের উদ্বেগ চরমে। অনেকেই জানিয়েছেন, ভিসার মেয়াদ, অফিসিয়াল ডেডলাইন বা চিকিৎসার জরুরি কারণেও তারা এই ফ্লাইট ধরেছিলেন। এখন তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির উত্তাপ এখন সাধারণ যাত্রীর নিত্য যাত্রায় ছায়া ফেলছে। ইরানের আকাশপথে এই নিষেধাজ্ঞা শুধু কূটনৈতিক নয়, বাস্তব জীবনের সমস্যা তৈরি করছে হাজার হাজার মানুষের জন্য। পরিস্থিতি কতটা জটিল হয়, তা নির্ভর করছে ইরান-ইজ়রায়েলের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের উপর। আপাতত সবাই চাইছে—তাড়াতাড়ি উত্তেজনা প্রশমিত হোক, আর স্বাভাবিক হোক আকাশপথ।