Life Style : “সানডে হোক বা মানডে, রোজ খাও আন্ডে”—এই বিজ্ঞাপনটা নিশ্চয় মনে আছে? এমনই বার্তা বহু বছর ধরেই দেওয়া হয়েছে টিভি, পত্র-পত্রিকায়। মায়েরা-ঠাকুমারা বলতেন, সকালে একটা ডিম খেলেই শরীর থাকে ফিট ও মজবুত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক নতুন প্রশ্ন—বেশি ডিম খাওয়া কি হার্ট অ্যাটাক ডেকে আনতে পারে?
কী বলছে গবেষণা?
একটি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণাপত্র, যেখানে ডিম খাওয়া এবং হৃদরোগের সম্ভাবনার মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। গবেষণাটি জানাচ্ছে, প্রতিদিন ডিম খাওয়ার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু নেই। বরং ডিমে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন ডি, বি কমপ্লেক্স, ওমেগা থ্রি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের পক্ষে উপকারী। তবে যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য কিছু সতর্কতা জারি করেছেন চিকিৎসকেরা।
ডিমে কি সত্যিই কোলেস্টেরল বাড়ে?
গবেষণা অনুযায়ী, ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের মাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে। তাই যাঁরা ইতিমধ্যে উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন, তাঁদের কুসুম না খেয়ে শুধু ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, ডিম ভেজে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটিও বাদ দিতে হবে। কারণ তেলে ভাজা ডিম শরীরে আরও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ কী?
বেশিরভাগ ডাক্তারই বলছেন, শরীর সুস্থ থাকলে এবং কোনও হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা না থাকলে রোজ একটা করে সেদ্ধ ডিম খাওয়া যেতে পারে। ডিমে থাকা ‘হেলদি ফ্যাট’ বা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের পক্ষে ভালো। তবে যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, তাঁদের নিয়মিত ডিম খাওয়া এবং বিশেষত কুসুম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডিমের অপবাদ কতটা সত্য?
বহু বছর ধরে ডিমকে ‘কোলেস্টেরল বাড়ায়’ এই অভিযোগে বাদ দেওয়া হয়েছে বহু ডায়েট থেকে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, ডিম শরীরের পক্ষে খারাপ নয় বরং পরিমিত ও সঠিকভাবে খাওয়া হলে এটি শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন মেটায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের ও প্রবীণদের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে ডিম অত্যন্ত কার্যকর।
তাহলে উপসংহার কী?
সবশেষে বলা যেতে পারে, ডিম খাওয়া মানেই হার্ট অ্যাটাক এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং যাঁরা নিয়ম মেনে, পরিমাণ বুঝে ডিম খাচ্ছেন, তাঁদের জন্য ডিম হতে পারে পুষ্টিকর এবং উপকারী খাবার। তবে যাঁদের পূর্বেই হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিম খাওয়া।
বেশি ডিম মানেই হার্ট অ্যাটাক নয়। বরং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অপর্যাপ্ত ব্যায়ামই বড় কারণ। তাই সঠিক পদ্ধতিতে খেলে ডিম হতে পারে আপনার পুষ্টির অন্যতম উৎস।