Malda : পুরাতন মালদা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা শুক্রবার সকাল থেকেই চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রসিলাদহ ও লক্ষী কলোনীর বহু বাড়িতে ট্যাপ থেকে যখন জল বের হতে শুরু করে, তখন দেখা যায় সেই জলে ভাসছে মুরগি ও পায়রার পালক। কারও কারও কল দিয়ে আবার লালচে রঙের জল বেরোচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো আতঙ্কে পরিবারগুলি। প্রশ্ন উঠছে, এই জল কি আদৌ পান করার যোগ্য?
পানীয় জলের নামে বিষ? আতঙ্কে পরিবারগুলি
শুধু স্বাদ বা গন্ধ নয়—এই জল দৃশ্যতই অস্বচ্ছ, এবং এর মধ্যে পালকের উপস্থিতি বাসিন্দাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব বর্মন বলেন, “আমরা সকালবেলায় এই জল দিয়ে রান্না করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেখি ছোট ছোট পালক ভাসছে! এটা কি মানুষের খাওয়ার জল?” একই অভিযোগ লক্ষী কলোনীর বাসিন্দা সোমা হালদারের, “পানীয় জলে লালচে রং আসছে অনেকদিন ধরেই। বলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। এখন তো পালক-সহ জল আসছে। আমাদের শিশু, বৃদ্ধ সবাই এই জল খাচ্ছে। অসুস্থ হলে দায় কে নেবে?”
পুরসভার নীরবতা ঘিরে ক্ষোভ
এই চরম দুর্দশার মধ্যেও প্রশাসনের কোনও কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। পুরসভার পক্ষ থেকে কেউ এলাকা পরিদর্শনে আসেননি বলেও ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জানানো হলেও, কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। এক বাসিন্দা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “ভোটের সময় সকলেই আসে দরজায় দরজায়, কিন্তু আমরা যখন জল চাই তখন সবাই নিরুদ্দেশ। এই প্রশাসনের কাছে আমাদের কোনও আশা নেই।”
স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন দূষিত জল পান করলে জলবাহিত রোগ যেমন টাইফয়েড, ডায়ারিয়া, হেপাটাইটিসের ঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়। এক স্বাস্থ্যকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“পানীয় জলে প্রাণীর পালক থাকা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। একে তো সাধারণত নোংরা জলাশয় থেকে জল তোলা হয়, তার উপর সঠিকভাবে ফিল্টারিং না হলে এই ধরণের দূষণ ঘটে।”
আশ্বাস নয়, দ্রুত ব্যবস্থা চান এলাকাবাসী
বাসিন্দারা বলছেন, আর আশ্বাস নয়, এবার চাই দৃঢ় পদক্ষেপ। তাঁরা চাইছেন জল সরবরাহ ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কার, জল পরিশোধনের আধুনিক ব্যবস্থা এবং নিয়মিত জল পরীক্ষার ব্যবস্থা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তবে কবে এই সমস্যার সমাধান হবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই দীর্ঘ দিনের জলের সমস্যা যে এবার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন রসিলাদহ ও লক্ষী কলোনীর বাসিন্দারা।
একবিংশ শতাব্দীর ভারতে আজও যদি কেউ জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেটি এক সামাজিক ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে। পুরাতন মালদার এই ঘটনা প্রশাসনের ঘুম ভাঙাবে তো?