India Israel Relations : মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাবনা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এই আবহে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সোমবার রাত থেকে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একের পর এক জরুরি ফোনালাপে ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই তিনি কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সামনে রয়েছেন আরও বড় নাম—মার্কিন প্রেসিডেন্ট, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ফোনালাপগুলির উদ্দেশ্য মূলত বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের অবহিত করা এবং কূটনৈতিক স্তরে সমর্থন আদায়।
মোদী-নেতানিয়াহুর ফোনালাপে শান্তির বার্তা
এই ঘটনাপ্রবাহের মাঝে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে একটি টুইট করে জানান, “ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে আমার ফোনালাপ হয়েছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। আমি ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং দ্রুত শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছি।” মোদীর এই বার্তায় স্পষ্ট—ভারত এই মুহূর্তে যুদ্ধ নয়, শান্তি চায়। মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনও বড় সংঘর্ষ ভারতের কৌশলগত স্বার্থে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই পরিস্থিতি থিতু করাই নয়াদিল্লির অগ্রাধিকার।
ভারতের উদ্বেগের নেপথ্যে কী?
মধ্যপ্রাচ্য বহু ভারতীয়ের কর্মস্থল। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে রয়েছে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহের উৎস। ফলে সামান্যতম অস্থিরতাও সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে ভারতের অর্থনীতি ও কূটনীতি উভয় ক্ষেত্রেই। এছাড়াও, ভারতের ঐতিহ্যগতভাবে ‘ব্যালান্সড’ বিদেশনীতি—যেখানে একদিকে যেমন ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তেমনি ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতির ইতিহাস—তাতে কোনও পক্ষের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিশ্বমঞ্চে ‘ডিপ্লোম্যাটিক রেস’ শুরু?
নেতানিয়াহুর টানা ফোনালাপ আসলে এক রকম কূটনৈতিক প্রচার। তিনি বোঝাতে চাইছেন, ইজরায়েলের অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে ন্যায্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি চাইছেন বিভিন্ন দেশের সমর্থন, যাতে আন্তর্জাতিক মহলে ইজরায়েল কোনওভাবেই একঘরে না হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেনের মতো বড় শক্তিগুলির প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
ভারতের অবস্থান—সতর্ক, স্থির ও কৌশলী
ভারত বরাবরই আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে সরাসরি হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকে। তবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। এই ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মোদীর মন্তব্য ছিল একান্ত কূটনৈতিক, কিন্তু স্পষ্ট বার্তা—“ভারত সংঘর্ষ চায় না, সমাধান চায়।”
বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে, তখন মোদী-নেতানিয়াহুর এই ফোনালাপ কেবল দুই দেশের সম্পর্ক নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তির প্রশ্নেও তাৎপর্যপূর্ণ। কূটনৈতিক স্তরে এই ধরনের আলোচনাগুলিই শেষপর্যন্ত দিশা দেখাতে পারে—সমর নয়, সংলাপের।