পুরীর রথযাত্রা মানেই লাখো মানুষের ঢল, যার মধ্যে শুধু দর্শনার্থী নয়, থাকে বহু বিদেশি পূর্ণার্থীও। সেই কথা মাথায় রেখেই ওড়িশা সরকার এবার বেশ কিছু কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছে। এবার রথে উঠতে পারবেন কেবলমাত্র মন্দির অনুমোদিত সেবায়েতরা। কেউ সেই নিয়ম লঙ্ঘন করলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
সেবায়েত ছাড়া রথে ওঠা নিষেধ
রবিবার মন্দির কমিটির সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন। বৈঠক শেষে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, রথে শুধুমাত্র অনুমোদিত সেবায়েতরাই উঠতে পারবেন। বাইরে কেউ এই নিয়ম অমান্য করলে তাঁকে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করবে। ইতিমধ্যেই মন্দির কমিটির কাছে সেবায়েতদের একটি চূড়ান্ত নামের তালিকাও চাওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
মোবাইল ফোনেও নিষেধাজ্ঞা
রথে সেবায়েতদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়েও কড়াকড়ি করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রথে উঠলে কেউ মোবাইল সঙ্গে রাখতে পারবেন না। কারণ, উৎসবের ধর্মীয় পরিবেশ বজায় রাখা ও নিরাপত্তার দিকটি সুনিশ্চিত করাই প্রধান উদ্দেশ্য।
সিসিটিভি থেকে কন্ট্রোল সেন্টার – নজরদারিতে জোর
রথযাত্রা ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য পুরী, ভুবনেশ্বর এবং কোনারকের মধ্যে থাকা সমস্ত রাস্তায় বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুরী টাউন থানায় একটি আধুনিক কন্ট্রোল সেন্টার খোলা হচ্ছে, যেখান থেকে গোটা এলাকার গতিবিধি মনিটর করা যাবে। প্রশাসনের মতে, এত বড় ভিড় সামাল দিতে হলে ডিজিটাল নজরদারি ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
ভক্তদের জন্য চালু হচ্ছে বিশেষ অ্যাপ
ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য আদানপ্রদানের জন্য ভক্তদের জন্য চালু করা হচ্ছে একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে রুট ম্যাপ, ভিড়ের পরিস্থিতি, জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। প্রশাসনের বক্তব্য, প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ভিড় সামলানো সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুরোধ
এই বিশাল জনসমাগমের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছে। ডিজিপি নিজেই জানিয়েছেন, প্রয়োজনে র্যাফ ও এনডিআরএফ মোতায়েন করা হবে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
তীব্র সতর্কবার্তা প্রশাসনের
সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার সতর্ক করে বলা হয়েছে—ধর্মীয় উৎসবের পবিত্রতা বজায় রাখতে হলে নিয়ম মানতেই হবে। একটুও শিথিলতা দেখানো হবে না। মন্দির চত্বর বা রথের কাছে কোনওরকম বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।
আগামী ২৭ জুন রথযাত্রা। তার আগে এই নির্দেশিকাগুলি শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, ধর্মীয় পরিবেশ রক্ষার দিক থেকেও এক বড় বার্তা বহন করে বলেই মনে করছে অনেকে।