Health Tips : ‘চাপ’— শব্দটা যত ছোট, এর প্রভাব ততই গভীর। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোথাও না কোথাও চাপের ছোঁয়া থাকেই। অফিসের টার্গেট, সংসারের দায়িত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন, কিংবা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা— তালিকাটা বিশাল। এমনকি কেউ কেউ এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে চাপটাকেই যেন জীবনের একটা ‘স্বাভাবিক’ অঙ্গ বলে মেনে নেন। কিন্তু এই স্বাভাবিক ভাবনাটাই হতে পারে এক ভয়ঙ্কর বিপদের সূচনা।
ডাক্তার কী বলছেন? মানসিক চাপেই কিডনির ক্যানসার?
সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নামী অনকোলজিস্ট ডা. পুষ্পিন্দর গুলিয়া জানিয়েছেন, “মানসিক চাপ বা দীর্ঘদিনের হাইপারটেনশন শুধু হার্ট অ্যাটাক নয়, কিডনির ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকিও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে।”
চিকিৎসক আরও জানান, মানসিক চাপ এবং উচ্চ রক্তচাপ— উভয়েই শরীরে একধরনের নীরব যুদ্ধ চালায়। এই অবস্থায় যকৃত, হৃৎপিণ্ড এবং কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।
কিডনির ক্যানসার কীভাবে ‘চুপিচুপি’ আসে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনির ক্যানসার প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়ে না। কারণ এর কোনও প্রকট উপসর্গ দেখা যায় না। একমাত্র নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষাই পারে সময় থাকতে বিপদ শনাক্ত করতে। দীর্ঘদিন মানসিক চাপ ও হাইপারটেনশনে থাকলে কিডনির কোষে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়। এর ফলে কোষে ক্ষয় শুরু হয় ও ক্যানসার সেল তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কী করবেন? সচেতন হওয়াই বাঁচার পথ
ডা. গুলিয়া মনে করিয়ে দেন— “সমস্যার শুরুর দিকেই যদি তাকে চিহ্নিত করা যায় এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা যায়, তাহলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।”
নিচে দেওয়া হল কিছু জরুরি পরামর্শ, যেগুলি মানলে কিডনির ক্যানসার এবং হাইপারটেনশনের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যেতে পারে:
-
নুন খাওয়া কমান: উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম মূল কারণ অতিরিক্ত লবণ।
-
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ওবেসিটি চাপ এবং ক্যানসার— দুয়েরই মূল কারণ।
-
প্রতিদিন হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন: রক্তচাপ এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
-
ভাল ঘুম এবং সময়মতো বিশ্রাম: মানসিক চাপের সেরা ওষুধ সময় মতো বিশ্রাম।
-
সঠিক ডায়েট: বেশি করে ফল ও সবজি খান, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান।
-
ইউরিন টেস্ট করান নিয়মিত: যাঁদের হাইপারটেনশন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত জরুরি।
সতর্ক হোন, কারণ ক্যানসার সময় নেয় না
বহু মানুষই মানসিক চাপকে পাত্তা দেন না। তাঁরা ভাবেন— “সবাই তো এই চাপেই চলছে”, বা “সময় পেলে পরে দেখব”। কিন্তু শরীর সময় পায় না। তার ক্ষয় শুরু হয়ে যায় নিঃশব্দে। তাই আজ, এখন, এই মুহূর্তেই প্রশ্ন করুন নিজেকে— আপনি কি চাপে আছেন? আপনি কি শরীরের ইঙ্গিতগুলো উপেক্ষা করছেন? যদি হ্যাঁ, তবে আর দেরি নয়। নিজেকে সময় দিন, পরীক্ষা করান, প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের কাছে যান।