Air India : একাধিক দুর্ঘটনার ছায়া পেরিয়ে ফের বিতর্কে জড়াল এয়ার ইন্ডিয়া। আন্তর্জাতিক রুটে চলা এক বিলাসবহুল উড়ান মাঝ আকাশেই যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ল। আর তার জেরেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখে পড়ে বিমানটি অবতরণ করতে বাধ্য হয় কলকাতা বিমানবন্দরে। এই ঘটনায় রাতভর চাঞ্চল্য ছড়ায় যাত্রীদের মধ্যে। আতঙ্কের মাঝেও পাইলটের বিচক্ষণতায় শেষমেশ কোনও বড় বিপদ এড়ানো গেল। তবে ফের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে যান্ত্রিক সমস্যা সামনে আসায় উদ্বিগ্ন বিমানযাত্রী এবং এভিয়েশন মহল।
কী ঘটেছিল ঠিক?
সোমবার রাতের ঘটনা। আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো থেকে ছেড়ে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নম্বর AI180 মুম্বইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করছিল। বোয়িং ৭৭৭-২০০LR মডেলের বিলাসবহুল এই বিমানটি প্রায় মাঝপথ অতিক্রম করেই পৌঁছায় কলকাতার আকাশে। ঠিক তখনই পাইলট বোঝেন, বিমানের বাঁ দিকের ইঞ্জিনে কিছু গোলমাল হচ্ছে। অভিজ্ঞ পাইলট সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন— যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে নিরাপদ বিকল্প বেছে নিতে হবে। কলকাতা বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে পাঠানো হয় জরুরি বার্তা। রাত ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ বিমানটি জরুরি অবতরণ করে কলকাতায়।
রাতে নামলেও যাত্রী নামাল ভোরে
যদিও বিমানটি রাতেই নামিয়ে আনা হয়, তবে ভোর পর্যন্ত যাত্রীদের নামানো হয়নি। কেন? সূত্রের খবর, বিমানে থাকা ২০০-রও বেশি যাত্রী তখন ঘুমিয়ে ছিলেন বা আতঙ্কে স্তব্ধ। রাত দু’টো নাগাদ ঠিক ছিল, বিমানটি ফের উড়ে যাবে মুম্বইয়ের দিকে। কিন্তু ইঞ্জিন পরীক্ষা করতে গিয়ে ত্রুটির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। ভোর ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ যাত্রীদের ধাপে ধাপে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ ও এয়ার ইন্ডিয়া কর্মীরা যাত্রীদের জন্য জরুরি সাহায্য ও খাবার জল পৌঁছে দেন।
কী বলছে এয়ার ইন্ডিয়া?
সরকারি সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম হলেও পাইলটের সতর্কতায় বিষয়টি বড় আকার নেয়নি। এই বিমানের পরবর্তী যাত্রা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে এবং বিকল্প উড়ানের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে— এমনটাই জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। তবে অভ্যন্তরীণ মহলে প্রশ্ন উঠছে— গত কিছু মাসে বারবার কেন যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ছে সংস্থার বিমান? কড়া নজরদারির দাবি উঠছে সংরক্ষণ নীতির উপরে।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা কেমন?
ঘটনার সময় বিমানে থাকা কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন, আচমকা বিমানের গতিবিধিতে অস্বাভাবিকতা টের পান তাঁরা। অনেকে ভাবেন, হয়তো আবহাওয়ার সমস্যা। কিন্তু পাইলটের ঘন ঘন ঘোষণা এবং পরে বিমান থামিয়ে দেওয়ায় বোঝা যায় পরিস্থিতি সিরিয়াস। এক যাত্রী বলেন, “আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কেবিন ক্রু এবং পাইলট আমাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। অবতরণের পর স্বস্তি পেলেও মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— এত দাম দিয়ে টিকিট কেটে যাত্রা করেও বারবার কেন এমন ঝুঁকি?”
প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা
গত কয়েক মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ উড়ানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কোথাও দরজা খুলতে চায়নি, কোথাও হাইড্রলিক সিস্টেমে গোলমাল, কোথাও বা ককপিটে অ্যালার্ম। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হল AI180 উড়ানের ঘটনা। ভারতের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নেমেছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বিমানটি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না বলেই জানানো হয়েছে।
প্রযুক্তির ওপর ভরসা করে আমরা আকাশে ভাসি। কিন্তু সেই প্রযুক্তিই যদি বারবার মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে কোনওরকম ছাড় না দেওয়াই ভবিষ্যতের একমাত্র পথ। না হলে যাত্রীদের বিশ্বাস হারানোর পরিণাম যে ভয়াবহ হতে পারে, তা বলে দিতে হয় না।