Operation Sindhu : গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সাইবার বিভ্রাটের জেরে আটকে পড়েছিলেন বহু ভারতীয় পড়ুয়া। মোবাইল কাজ করছিল না, ইন্টারনেটও ছিল অনিয়মিত। বহু পরিবার ছেলেমেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে না পেরে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। যেখানে দিন কাটছিল আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায়, সেখানেই আলো হয়ে এলো ভারত সরকারের উদ্যোগ—‘অপারেশন সিন্ধু’। সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে পরিকল্পনা, বিদেশ মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে চলে অপারেশন।
‘অপারেশন সিন্ধু’-র প্রথম ধাপে উদ্ধার ১১০ জন
বৃহস্পতিবার সকালে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভান থেকে একটানা ফ্লাইটে ১১০ জন ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীকে ফিরিয়ে আনা হয়। বিমানটি ছিল ইন্ডিগোর বিশেষ ব্যবস্থা। সবরকম নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মধ্যে দিয়েই সম্পূর্ণ করা হয় মিশনের প্রথম ধাপ। এই উদ্ধার প্রক্রিয়ায় শুধু ছাত্র নয়, ছিলেন কিছু শিক্ষক ও গবেষণারত ভারতীয় নাগরিকও। প্রত্যেককেই ভারতের মাটিতে পা রাখতে দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল বহু উদ্বিগ্ন পরিবার।
কীভাবে সাজানো হয়েছিল উদ্ধার অভিযান?
সূত্রের খবর, ইরানে সরাসরি উদ্ধার কাজ সম্ভব ছিল না। তাই ছাত্রদের সীমান্ত অতিক্রম করে আর্মেনিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সীমান্ত পেরোনোর পরে তাদের ইয়েরেভানে নিয়ে আসা হয়, যেখানে অপেক্ষা করছিল ইন্ডিগোর একটি চার্টার্ড বিমান। মিশনের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রক, সুরক্ষা বাহিনী ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ দফতর একসঙ্গে কাজ করেছে। বিভিন্ন স্তরে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেও সাহায্য নেওয়া হয়েছে আর্মেনিয়া সরকারের।
মানবিকতার জয়, সরকারের প্রশংসায় ভাসছে পরিবারগুলি
এমন জটিল পরিস্থিতিতে এত দ্রুত ও নিরাপদে উদ্ধার করে আনা সম্ভব হয়েছে দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পর অনেকেই কেঁদে ফেলেন। অনেকে বলেন—”আমরা ভেবেছিলাম আমাদের সন্তান হয়তো আর ফিরবে না। সরকারকে ধন্যবাদ জানাতেও ভাষা নেই।” এই উদ্ধার মিশনে কোনওরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সফলভাবে প্রথম পর্ব শেষ হওয়ায় প্রশাসনও সন্তুষ্ট।
এখনও বাকি অনেকে, শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপ
জানা যাচ্ছে, এখনও ইরানের বিভিন্ন শহরে অন্তত ২০০-২৫০ ভারতীয় পড়ুয়া আটকে রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই আর্মেনিয়া বা অন্য প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার প্রস্তুতিতে রয়েছেন। খুব শীঘ্রই অপারেশন সিন্ধু-র দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। সরকার আশ্বাস দিয়েছে, যতজন ভারতীয় এখনও বিদেশে আটকে রয়েছেন, সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, এবং প্রয়োজন হলে হেল্পলাইন নম্বরও চালু থাকবে।
‘অপারেশন সিন্ধু’ শুধুই এক উদ্ধার মিশন নয়, এটি একটি বার্তা—বিশ্বের যে কোনও কোণে ভারতীয় নাগরিক সমস্যায় পড়লে, পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে তাঁর নিজের দেশ। সাহস, পরিকল্পনা ও মানবিক দায়িত্ববোধ মিশিয়ে তৈরি এই অভিযান আরও একবার বিশ্বকে দেখিয়ে দিল, ভারত নিজের সন্তানদের কোনও দিন একা ফেলে রাখে না।