Iran Israel Conflict : মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ছুঁয়েছে শিখর। সপ্তম দিনে পড়ল ইরান ও ইজ়রায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ। সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, এবার সরাসরি সিভিল স্থাপনায় হামলার অভিযোগ উঠে এল। ইজ়রায়েলের একটি হাসপাতাল লক্ষ্য করে ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তা যুদ্ধের নয়া মাত্রা বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
হাসপাতালে হামলা! চিকিৎসা জগতেই ছড়াল আতঙ্ক
জানা গিয়েছে, ইজ়রায়েলের বিখ্যাত ‘সোরোকা মেডিক্যাল সেন্টার’-এর উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দক্ষিণ ইজ়রায়েলের বেয়ারশেভা শহরে অবস্থিত এই হাসপাতালটি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পরিসেবার কেন্দ্র। সেখানে বহু অসুস্থ রোগী ভর্তি, রয়েছে নবজাতক বিভাগ, অস্ত্রোপচারের ইউনিট ও জরুরি বিভাগ।
হঠাৎ একাধিক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে আশপাশ। সাময়িকভাবে চিকিৎসা পরিষেবাও ব্যাহত হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে।
পারমাণবিক কেন্দ্রে ইজ়রায়েলের পাল্টা আঘাত
ইজ়রায়েলও চুপ করে বসে থাকেনি। পাল্টা আঘাত হেনেছে ইরানের খোন্দাব পারমাণবিক কেন্দ্রে। তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি ইরানের অন্যতম সেন্সিটিভ নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি। সূত্রের দাবি, এই কেন্দ্রেই পারমাণবিক প্রযুক্তির গোপন উন্নয়ন চলছিল।
ইজ়রায়েলি সেনার তরফে জানানো হয়েছে, তাদের ড্রোন বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে। বিস্ফোরণে পারমাণবিক কেন্দ্রটির ক্ষতি হয়েছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিকভাবে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
হাসপাতাল ও পারমাণবিক কেন্দ্রের মতো সিভিল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ সচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘‘এই যুদ্ধ যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই একটি অস্থির অগ্নিগর্ভ অঞ্চলে পরিণত হবে।’’
বিশ্লেষকদের মতে, এবার যুদ্ধের রূপরেখা বদলে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটিতে সীমাবদ্ধ না থেকে, দু’দেশই পরস্পরের ‘ভুলযোগ্য নয়’ কাঠামোতে আঘাত হানছে। যার ফলে মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হতে পারে।
ইরানের কড়া হুঁশিয়ারি, ইজ়রায়েলও প্রস্তুত
তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যদি ইজ়রায়েল কোনও আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে হামলা চালায়, তবে তার ফলাফল ভয়ঙ্কর হবে। অন্যদিকে, ইজ়রায়েলও নিজেদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ‘ফুল স্টেট অফ অ্যালার্ট’-এ রেখেছে।
বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক আলোচনাও চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে দু’দেশকে সংযত থাকার আবেদন জানিয়েছে। যদিও কোনও পক্ষই আপাতত পিছু হটার লক্ষণ দেখাচ্ছে না।
সামনে আরও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই যুদ্ধ থামানো না যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতেই এতে জড়িয়ে যেতে পারে অন্যান্য দেশও। তখন সেটা আর শুধু ইরান-ইজ়রায়েলের যুদ্ধ থাকবে না, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিস্তৃত এক সর্বগ্রাসী যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।
এখন প্রশ্ন—কে থামাবে এই আগুন?
ইজ়রায়েল যখন হাসপাতালের দিকে রকেট উড়ে আসতে দেখছে, আর ইরান যখন তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রের ছিন্নভিন্ন ছবি দেখছে, তখন পুরো বিশ্ব বসে আছে এক অস্থির প্রতীক্ষায়—এই আগুন কে নিভাবে?