ATM Loot : রাত গভীর হতেই ব্যাংক এলাকায় শুরু হচ্ছে নিশ্ছিদ্র অভিযান। টার্গেট একটাই—এটিএম ভেঙে লক্ষ লক্ষ টাকা চুরি। রায়গঞ্জ, ময়নাগুড়ি, শিলিগুড়ি—একটি করে স্টেপ এগোচ্ছে চোরের দল। তবে বিষয়টা আর সাধারণ ডাকাতির মধ্যে আটকে নেই। পুলিশ তদন্তে যা উঠে এসেছে, তা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো।
শুধু স্থানীয় নয়, বাইরে থেকে আসছে ডাকাতদল
পুলিশের সূত্র বলছে, এই ডাকাতি উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও পঞ্জাব থেকে আসা দুষ্কৃতীদের সুপরিকল্পিত অপারেশন। প্রতি দলে থাকছে আলাদা আলাদা ভূমিকার লোক। কেউ আগে জায়গার রেকি করে, কেউ সময় মাপে, আর কেউ ওয়েল্ডিং মেশিন ও গ্যাস কাটার দিয়ে এটিএম কাটার দায়িত্বে থাকে।
তাঁদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলা হচ্ছে, কারণ ময়নাগুড়িতে ধরা পড়া চার জনের মধ্যে এক জন ছিল সাবেক মেকানিক, বাকিরা পুরোনো অপরাধে অভিযুক্ত।
ময়নাগুড়িতে ধরা পড়ল প্রথম দল, উদ্ধার ১৬ লক্ষ টাকা
ময়নাগুড়ির একটি জঙ্গলে নাইট ভিশন ড্রোন ব্যবহার করে চার দুষ্কৃতীকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ১৬ লক্ষ টাকা। পুলিশের দাবি, এই গ্যাং মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি এটিএম লুঠ করে পালিয়ে গিয়েছিল। এমনকি, নিজেদের গাড়ির নম্বরপ্লেট বদলে দিয়েছিল পালানোর আগে। এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট—এটা কোনও চটজলদি ছক নয়, বরং বহুদিন ধরে সাজানো প্রশিক্ষিত চক্র।
শিলিগুড়িতেও একই কায়দায় রাতের হামলা
বুধবার রাতে, শিলিগুড়ির চম্পাশাড়ি মোড় এলাকায় একটি SBI-এর এটিএম ভাঙচুর করে পালায় দুষ্কৃতীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত ২টা নাগাদ একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়, দ্রুত গতিতে কাজ সেরে ফের চম্পট দেয়।
ঠিক কত টাকা চুরি হয়েছে, তা এখনও প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে আশপাশের সিসিটিভি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর জেলার সব থানায় হাই অ্যালার্ট জারি হয়েছে।
রায়গঞ্জের লুঠে এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা
রায়গঞ্জের এটিএম থেকে ৩৩ লক্ষ টাকা চুরি হয়েছিল মার্চ মাসে। এখনও সেই ঘটনায় কোনও অভিযুক্ত ধরা পড়েনি। পুলিশের দাবি, তদন্ত চলছে, তবে এখন যা অবস্থা, তাতে এটাই প্রমাণিত—একই চক্র তিনটি জেলায় লাগাতার ডাকাতি চালাচ্ছে।
প্রশাসনের কড়া বার্তা, নজরে সীমান্ত অঞ্চল
এই সিরিজ লুঠের ঘটনায় উত্তরবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্ত দিয়ে কেউ প্রবেশ করছে কি না। শহরের এটিএমগুলিতেও বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল, দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা।
চূড়ান্ত প্রশ্ন—কে রুখবে এই ‘মেশিন গ্যাং’-কে?
এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তারা বারবার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ, স্ট্র্যাটেজি, প্রযুক্তি—সব মিলে যেন তারা এক ‘মেশিন গ্যাং’। সাধারণ পুলিশের দক্ষতা কি যথেষ্ট এই গ্যাং রুখতে? প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকাও নিয়ে।