পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের অন্যতম ব্যস্ত দুই স্টেশন—বিধাননগর রোড ও দমদম। সেখানে প্রতিদিন যথাক্রমে প্রায় ১.৭ লক্ষ ও ১.৫ লক্ষ যাত্রী ওঠানামা করেন। এই প্রবল ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনে অব্যবস্থা বাড়ছে, টিকিট কাটতে সময় লাগছে, প্ল্যাটফর্মে হাঁটার জায়গা নেই।
বিধাননগরে আর কোনও ভেন্ডার নয়
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রেল বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে সমস্ত ভেন্ডার—চা, পান, খাবার বা অন্য পসার সাজিয়ে বসা দোকানদারদের—সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এই দোকানগুলিই প্ল্যাটফর্মে ভিড় বাড়িয়ে যাত্রী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে।
দমদমে আসছে নতুন টিকিট কাউন্টার
যাত্রীদের সুবিধার জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হয়েছে—দমদম স্টেশনে একটি নতুন টিকিট বুকিং কাউন্টার তৈরি করা হবে। এতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হবে না, টিকিট কাটার সময়ও অনেকটা বাঁচবে।
মেট্রো সম্প্রসারণে আরও চাপ আসছে এই স্টেশনগুলোতে
কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ ও ইয়েলো লাইনের সম্প্রসারণের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীদের চাপ আরও বেশি করে পড়ছে শিয়ালদহ, দমদম এবং বিধাননগর স্টেশনগুলিতে। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনকে ভবিষ্যতের ‘হাব’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বিমানবন্দর, নিউ টাউন, সেক্টর ফাইভ, বনগাঁ ও হাসনাবাদগামী যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হয়ে উঠবে।
ট্রেন সংখ্যা বেড়েছে, সঙ্গে ভিড়ও
বর্তমানে দমদম স্টেশনে দিনে ২২২টি ও বিধাননগর রোড স্টেশনে ২১৬টি লোকাল ট্রেন আপ ও ডাউন মিলিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী পরিকাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
রেলের তরফে ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ পরিকল্পনা
এই পরিস্থিতিতে পূর্ব রেলের তরফে বৃহস্পতিবার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এতে মূলত স্টেশন চত্বর পরিষ্কার রাখা, যাত্রী চলাচল সহজ করা, টিকিট কাটার প্রক্রিয়া আরও গতিময় করাই মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে আরও প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্যোগ আনার কথাও ভাবা হচ্ছে।
যাত্রীদের জন্য সুবিধা, কিন্তু চ্যালেঞ্জও কম নয়
যদিও এই পদক্ষেপ যাত্রীদের সুবিধার জন্য নেওয়া হচ্ছে, তবুও এতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বহু বছর ধরে স্টেশনে বসা ভেন্ডারদের পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার মানে নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়বে।
বিধাননগর ও দমদম স্টেশনে রেলের এই পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে সাহসী এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু এর বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে এবং যাত্রীদের জীবনে সত্যিই কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, সেটাই এখন দেখার।