দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির ঘিরে একের পর এক বিতর্ক তুঙ্গে। কখনও মন্দিরের নাম নিয়ে, কখনও বা মূর্তি নিয়ে, আবার কখনও পুরী থেকে আনা পবিত্র নিমকাঠের ব্যবহার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাতে এবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে তোপ দাগলেন বিজেপি এবং ওড়িশার বিদ্বজ্জনদের একাংশের উদ্দেশে।
‘আমার বাড়িতেই চারটে নিমগাছ, কটা লাগবে বলেন?’
নিমকাঠ নিয়ে চুরির অভিযোগ শুনে স্পষ্ট কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর—”বলা হচ্ছে আমি নাকি নিমকাঠও চুরি করেছি! আমার নিজের বাড়িতে চার চারটে নিমগাছ আছে। কটা লাগবে, জিজ্ঞেস করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত খারাপ অবস্থা আসেনি যে নিমগাছ চুরি করতে হবে।” তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট, কোনওরকম কটাক্ষ তিনি আর সহ্য করতে নারাজ।
‘মন্দির তো গোটা দেশেই আছে, রাগটা কোথায়?’
পুরীর আদলে মন্দির নির্মাণ হওয়া নিয়ে যখন ওড়িশা থেকে প্রশ্ন উঠছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট জবাব—”আমি পুরী মন্দিরকে সম্মান করি, জগন্নাথ ধামকেও সম্মান করি। কিন্তু মা কালীর মন্দির যেমন গোটা দেশে আছে, মহাদেবের মন্দির যেমন সর্বত্র, তেমন জগন্নাথের মন্দিরও তো নানা জায়গায় থাকতে পারে। বিজেপির এত রাগের কারণ কী?”
‘জগন্নাথ মূর্তি কিনতেও পাওয়া যায়’
দিঘার মূর্তি নিয়ে চলা বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা যুক্তি—”জগন্নাথের মূর্তি তো কিনতেও পাওয়া যায়। আমাদের মন্দিরে যে মূর্তি ছিল, সেটা মার্বেলের। যে মূর্তি নিয়ে কথা উঠছে, সেটাও কেউ উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছেন। এমনকী যেখান থেকে বলছে ওটা এসেছে, সেখান থেকেও নয়। পুজো করতে এসেছিলেন কেন, তা নিয়েও তাঁকে জবাবদিহি করতে হয়েছে। এখন পুরোহিতদের বারণ করা হচ্ছে এখানে পুজো না করতে!”
‘বিজেপি করলে সব ঠিক, আমরা করলেই দোষ?’
বিষয়টিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সোজাসাপটা মন্তব্য—”বিজেপি মন্দির নিয়ে কিছু করলে তো আমি কোনও টিপ্পনি করি না। তাহলে ওদের এত রাগ হচ্ছে কেন? আমি পুরী গেলে তো RSS বিক্ষোভ দেখায়। আজ জগন্নাথ ধাম নিয়ে এত হিংসা?”
মুর্শিদাবাদ সফরের আগে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে মন্তব্য
হাওড়া থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে রাজ্যপালের রিপোর্ট প্রসঙ্গেও প্রশ্নের মুখে পড়েন মমতা। বলেন, “দয়া করে এ নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমি কিছুই জানি না। রাজ্যপাল এখনও হাসপাতালে ভর্তি, আমি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”
‘অশান্তি বাড়াতে চাইনি, তাই দেরিতে যাচ্ছি’
মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক অশান্তির মধ্যে নিহত হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। সেই প্রসঙ্গে মমতার ব্যাখ্যা—”আমি চাইনি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হোক। দিঘার মন্দিরের অনুষ্ঠান অনেক আগে থেকে নির্ধারিত ছিল, তাই সেটা শেষ করেই যাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা হবে, তবে কেউ সাহায্য নিতে না চাইলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”
মন্দির বিতর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্পষ্ট বার্তা রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝেই যেন রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল। এবার দেখার, এই মন্তব্যের পরে বিজেপি এবং ওড়িশার পক্ষথেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে।