কলকাতা: অগস্ট মাসের শেষ ভাগে এসেও যেন বৃষ্টির তোড় থামছে না। উত্তর ওড়িশা-গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে ঘূর্ণাবর্ত এবং মৌসুমী অক্ষরেখার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করার ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দফায় দফায় বৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে।
ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপের পরিস্থিতি
আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি ঘূর্ণাবর্ত বর্তমানে উত্তর ওড়িশা এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর অবস্থান করছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫.৮ কিলোমিটার উপরে। একই সঙ্গে, একটি মৌসুমী অক্ষরেখা রাজস্থানের জয়সলমের থেকে কোটা, রাঁচি, বাঁকুড়া, দিঘা এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে বিস্তৃত। এই দুই সিস্টেমের প্রভাবেই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করছে, যা ভারী বৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আগামী দুই দিন এই পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টির দেখা মিলবে। কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত মাঝারি থেকে তীব্র হতে পারে।
সতর্কতা এবং সতর্কতা বার্তা
আবহাওয়া দফতর থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর— এই তিনটি জেলায় কমলা সতর্কতা বা Orange Alert জারি করা হয়েছে। এই জেলাগুলোতে অতি ভারী বৃষ্টির (৭-২০ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার সহ একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বিশেষত হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে ৭-১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সমুদ্র উপকূল এবং অন্যান্য প্রভাব
বৃষ্টির পাশাপাশি উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৩৫-৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা দমকায় ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। আগামী ২৩ অগস্ট পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকার পূর্বাভাস থাকায় মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে বারণ করা হয়েছে।
এই বৃষ্টির ফলে শহরের নিচু এলাকাগুলিতে জল জমার সম্ভাবনা রয়েছে। শহরাঞ্চলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। কাঁচা রাস্তা এবং মাটির বাড়ির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, শস্য ও উদ্যানপালনের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়ায় সাধারণ মানুষকে খোলা জায়গায় না থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে, প্রকৃতির এই রুদ্ররূপের ফলে সাধারণ জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।