গত সপ্তাহে আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। এয়ার ইন্ডিয়ার এক যাত্রীবাহী বিমান বিজে হস্টেলের ছাদে ধাক্কা মেরে ভেঙে পড়ে। প্রাণহানির পাশাপাশি তৈরি হয় বড় প্রশ্ন—বিমানবন্দরের পাশে এমন উঁচু বাড়ি কীভাবে? এই ঘটনার পরই সক্রিয় হয় অসামরিক উড়ান পরিবহণ মন্ত্রক। আকাশপথের নিরাপত্তা নিয়ে তারা যে আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়, তা পরিষ্কার করে দিল এক নতুন খসড়া বিলের মাধ্যমে।
‘এয়ারক্রাফ্ট রুলস ২০২৫’: কী বলছে নতুন আইন?
১৮ জুন কেন্দ্র প্রকাশ করেছে Air Craft (Demolition of Obstructions) Rules 2025। এই খসড়া বিলে স্পষ্ট বলা হয়েছে—এয়ারডোম বা বিমানবন্দর এলাকা ঘিরে থাকা গাছ বা বিল্ডিং যদি নির্ধারিত উচ্চতা লঙ্ঘন করে, তাহলে কর্তৃপক্ষ তা ভাঙতে বা কেটে ফেলতে পারে। যে কোনও বিল্ডিং, যদি উড়ানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে সেই মালিককে নোটিস দেওয়া হবে। নোটিস পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে বিল্ডিং প্ল্যান, উচ্চতার নথি সহ যাবতীয় তথ্য।
নির্দেশ অমান্য? তাহলে সরাসরি ভাঙচুর
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যদি তথ্য না পাওয়া যায়, বা যদি উচ্চতা সীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়, তাহলে DGCA বা এয়ারপোর্ট অফিসার ইনচার্জ নিজে থেকেই গাছ কাটা বা বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দিতে পারেন। এমনকি প্রয়োজন পড়লে জেলাশাসকের সহায়তায় বলপ্রয়োগ করে বিল্ডিং বা গাছ সরিয়ে দেওয়া যাবে। এই সব কাজ হবে দিনের আলোতেই, মালিককে আগাম জানিয়ে।
ক্ষতিপূরণ পাবেন, কিন্তু কিছু শর্তে
যাদের গাছ কাটা বা বাড়ি ভাঙা পড়বে, তারা ভারতীয় বায়ুযান আইনের ২২ নম্বর ধারার অধীনে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণের অধিকার মিলবে শুধু তখনই, যদি সেই নির্মাণ পূর্বেই বৈধ নথি-সহ হয়ে থাকে। সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশের পর যদি কেউ নতুন করে কোনও অবৈধ বা উচ্চতাসীমা লঙ্ঘনকারী নির্মাণ করেন, তাহলে তাঁরা কোনও ক্ষতিপূরণ পাবেন না—এই কথাও বিল স্পষ্ট করে দিয়েছে।
ভয় থেকে সচেতনতা, সচেতনতা থেকে আইন
আকাশপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে দেশে। কখনও ড্রোনের সমস্যা, কখনও পাখির ধাক্কা, কখনও আবার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের গাফিলতি। এবার কেন্দ্র ঠিক করল, অন্তত অবৈধ ও বিপজ্জনক নির্মাণের কারণে আর কোনও দুর্ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। এই বিল যদি দ্রুত গেজেটে প্রকাশিত হয়ে আইন হিসেবে কার্যকর হয়, তবে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের চেহারা বদলাতে বাধ্য। উঁচু বিল্ডিংয়ের মালিকদের শুরু করতে হবে উচ্চতা যাচাইয়ের কাজ। আর প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
আকাশে উড়তে গেলে শুধু বিমানের পাখা নয়, মাটির নিচের নকশাটাও নিরাপদ হতে হয়। ‘Air Craft Demolition Rules 2025’ তারই বার্তা দিল—ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা রুখতে সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে, গাফিলতির আকাশে আরও মৃত্যু নামবে।