Air India Plane Crash : এটা ছিল এক অন্ধকার সকাল, যেখানে প্রত্যাশা ছিল গন্তব্যে পৌঁছনোর, কিন্তু তা পরিণত হল ভয়ঙ্কর এক বিপর্যয়ে। এয়ার ইন্ডিয়ার AI 171 ফ্লাইটটি উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই ভেঙে পড়ল। প্রায় সব যাত্রীরই মৃত্যু হয়, কেবল একজন বাদে। কী এমন হল যে মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যু এসে গ্রাস করল একটি সম্পূর্ণ বিমানের যাত্রীদের?
বোয়িং ৭৮৭: প্রযুক্তির আশীর্বাদ না অভিশাপ?
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭—যা ‘মোর ইলেকট্রিক এয়ারক্রাফট’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ প্রচলিত হাইড্রোলিক বা নিউমেটিক প্রযুক্তির বদলে পুরো বিমানটি নির্ভর করে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উপর। এই বৈদ্যুতিক ভিত্তি যে এক সময় শক্তি সাশ্রয়ের প্রতীক ছিল, আজ সেটা নিয়েই উঠছে বড় প্রশ্ন।
VFSG: সুবিধা না ফাঁদ?
মূলত VFSG (Variable Frequency Starter Generator) হলো সেই সিস্টেম, যা বিমানের ইঞ্জিন চালু করে এবং উড়ানের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই সাব-সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দিলে ইঞ্জিনে অতিরিক্ত বা কম বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারে, যার উপর পাইলটদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, AI 171-এ বিস্ফোরণের যে শব্দ পাওয়া গিয়েছিল তা হয়তো VFSG থেকেই উৎপন্ন।
যাত্রী বাঁচলেন, বললেন “বিস্ফোরণ!”
একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি একপ্রকার ‘বিস্ফোরণের মতো শব্দ’ শুনতে পান। এক বা দুই ইঞ্জিনে বিভ্রাট ঘটলেও বোয়িং ৭৮৭-এর মতো অত্যাধুনিক বিমানে তা সামলানোর ব্যবস্থা থাকার কথা। তাহলে কেন এত দ্রুত নামল বিমানটি? প্রশ্নটা এখানেই।
RAT প্রযুক্তি: ব্যাকআপ তো ছিল, তবুও কেন ব্যর্থ?
RAT বা Ram Air Turbine এমন এক ব্যাকআপ সিস্টেম, যা জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র মৌলিক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, অবতরণে নয়। তদন্তে উঠে এসেছে, RAT বেরিয়ে আসার সম্ভাবনার ছবিও। আবার দেখা যাচ্ছে, VFSG যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে EEC বা থ্রটল কম্পিউটারও কাজ বন্ধ করে দেয়। তখন পাইলট চাইলেও থ্রাস্ট বাড়াতে পারেন না।
সময় কম, বিকল্প অপ্রস্তুত
এই অবস্থায় APU (Auxiliary Power Unit) একমাত্র ভরসা হতে পারত, কিন্তু সেটি চালু হতে ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে। তাই এই বিকল্প ব্যবস্থাটিও বিমানের পতন রোধ করতে পারেনি।
পাইলটের ভুল? না কি সিস্টেমের গাফিলতি?
কিছু সিনিয়র পাইলটের ধারণা, স্টার্টাল এফেক্ট বা হঠাৎ চাপে ভুল সিদ্ধান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনকি কেউ কেউ মনে করছেন, পাইলটরা হয়তো জিরো ফুয়েল বেট দিয়ে ফেলেছিলেন, যার ফলে কম্পিউটার ভুল হিসেব করেছিল থ্রাস্টের।
অতিরিক্ত মালবোঝাই কি দায়ী?
অন্য দিকে বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন অমিত সিং বলেন, যদি বিমানে অতিরিক্ত মাল বোঝাই করা হয়, তবে তা দীর্ঘ রানওয়ে দরকার করে এবং ইঞ্জিন বিকল হলে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়। বিষয়টা এত সহজ নয়, কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতোও নয়।
প্রশ্নই এখন একমাত্র উত্তর
এতগুলি সম্ভাবনার মাঝে আজও AI 171-এর প্রকৃত দুর্ঘটনার কারণ একটি ধোঁয়াশা। বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ব্যর্থতা, VFSG এর গাফিলতি, পাইলটের সিদ্ধান্ত না কি অতিরিক্ত মাল—সত্যটা হয়তো তদন্ত শেষেই জানা যাবে। কিন্তু এ এক কষ্টদায়ক সত্য, যার মাশুল দিয়েছে নিরীহ যাত্রীরা।