টানা দ্বিতীয়বারের জন্য বড় আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট বাতিল করল এয়ার ইন্ডিয়া। ১৭ জুন দিল্লি থেকে প্যারিসের উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI143-এর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এই ঘটনার জেরে চরম অসুবিধার মুখে পড়েন বহু আন্তর্জাতিক যাত্রী। এর আগে ১৬ জুন আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী ফ্লাইট বাতিল করেছিল সংস্থাটি।
ফ্লাইট বাতিলের কারণ জানাল এয়ার ইন্ডিয়া
বিমান বাতিল হওয়ার কারণ হিসেবে এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র জানান, “উড়ানের আগে চালানো প্রি-ফ্লাইট চেকিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ধরা পড়ে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা চলছে। তবে প্যারিসের শার্ল দ্য গল (CDG) বিমানবন্দরে রাতের উড়ানে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমান চালানো সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই AI143 ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে।”
প্রাক-নির্ধারিত সময় মেনে উড়ানটি ছাড়তে না পারার কারণে CDG বিমানবন্দরের রাতের সীমিত উড়ান নীতির মধ্যে ফেঁসে যায় এই ফ্লাইট। ফলে কারিগরি সমস্যার সমাধান হলেও নির্ধারিত সময়ে উড়ান চালানো সম্ভব হয়নি বলে জানায় সংস্থা।
যাত্রীদের জন্য কী সুবিধা দিচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া?
এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের যেন কোনওভাবেই ভোগান্তি না হয়, সে দিকটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই ফ্লাইট বাতিল হওয়ায়—
-
যাত্রীদের জন্য হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে,
-
কেউ চাইলে পুরো টিকিটের মূল্য ফেরত পাবেন,
-
আবার কেউ চাইলে বিনামূল্যে পুনঃনির্ধারিত ফ্লাইটেও যাত্রা করতে পারবেন।
এই পরিষেবাগুলি যাত্রীদের পছন্দ অনুযায়ীই দেওয়া হবে বলে সংস্থার আশ্বাস।
প্যারিস–দিল্লি ফেরত ফ্লাইটও বাতিল
দিল্লি থেকে প্যারিসগামী ফ্লাইট AI143 বাতিল হওয়ার অর্থ, একইসঙ্গে বাতিল হয়ে গিয়েছে ১৭ জুন প্যারিস থেকে দিল্লিগামী রিটার্ন ফ্লাইট AI142-ও। ফলে শুধু ভারতে থাকা যাত্রীরাই নন, প্যারিসে থাকা বহু ভারতীয় নাগরিকও আটকে পড়েছেন এই ঘোষণার ফলে।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া
ফ্লাইট বাতিলের খবর পেয়ে বহু যাত্রী সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, অফিসিয়াল মিটিং, চিকিৎসা বা জরুরি কাজের জন্য তাঁদের এই সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহূর্তে বাতিলের ফলে সব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। তবে অনেকে এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে হোটেল, রিফান্ড ও পুনঃনির্ধারণের মতো দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেও মনে করছেন।
কী ঘটছে এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে?
প্রসঙ্গত, এয়ার ইন্ডিয়া সম্প্রতি একাধিক আন্তর্জাতিক রুটে পরিষেবা বাড়ানোর ঘোষণা করেছিল। নতুন করে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার নানা রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। কিন্তু বারবার ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা সেই পরিকল্পনার ওপরই প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে যখন টাটার অধীনে আসার পর ব্র্যান্ড ইমেজ পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে, তখন বারবার এরকম বড় উড়ান বাতিল ভবিষ্যতের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
একদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে কোনও ত্রুটি নিয়ে ছাড় দেওয়া উচিত নয়, ঠিক যেমনটি করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। কিন্তু অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের প্রতিদিনকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই পরিষেবাগুলিতে আরও স্বচ্ছতা, আগাম বার্তা এবং যথাযথ পরিকল্পনা চাই। বারবার এই ধরনের বড় ফ্লাইট বাতিল হলে, যাত্রীরা অন্য এয়ারলাইন্সের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন, তা বলাই বাহুল্য।