চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ক্যাম্পাসেই ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জ্ঞানশেখরনকে সোমবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে মহিলা আদালত। বিচারক রাজালক্ষ্মী জানান, দোষীর ন্যূনতম ৩০ বছর জেল হতেই হবে, সঙ্গে দিতে হবে ৯০ হাজার টাকা জরিমানাও। এই রায়ে স্বস্তি মিলেছে নির্যাতিতার পরিবারে, আলোড়িত গোটা তামিলনাড়ু।
ছবির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করে ধর্ষণ, নির্জন ক্যাম্পাসেই ঘটেছিল ঘটনা
২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাত আটটার পর ক্যাম্পাসের ওল্ড বিল্ডিংয়ের কাছে নির্জন জায়গায় বন্ধু সহ বসে ছিলেন নির্যাতিতা। ঠিক সেই সময় সেখানে ঢুকে পড়ে ৩৭ বছরের জ্ঞানশেখরন, যার ক্যাম্পাসের কাছেই বিরিয়ানির দোকান ছিল। অভিযোগ, তিনি ছাত্রী ও তার বন্ধুর আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করেন এবং ছাত্রটিকে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন। তারপর নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার সময় বহিরাগত হয়েও সে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে—এটা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
১১টি ধারায় দোষী, একাধিক অপরাধে জড়িত ছিল জ্ঞানশেখরন
এই মামলায় জ্ঞানশেখরনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, অপহরণ, ভয় দেখানোসহ মোট ১১টি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ পেশ করে ১০০ পাতার চার্জশিট, সাক্ষী দেন মোট ২৯ জন। জানা যায়, এই ঘটনার আগেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, কিডন্যাপিং, এমনকি ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। চেন্নাইয়ে অন্তত ১৫টি অপরাধে তার নাম জড়িত। পুলিশের তদন্তে তার বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ১০০টি গোল্ড বন্ড ও একটি এসইউভি।
‘আমি বাবা-মায়ের দায়িত্বে আছি’, আদালতে করুণা চেয়েছিল দোষী
রায়ের আগে জ্ঞানশেখরন তার বৃদ্ধা মা ও আট বছরের মেয়ের কথা তুলে ধরে কম শাস্তির আরজি জানিয়েছিল। কিন্তু বিচারক রাজালক্ষ্মী জানান, এই অপরাধ সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে, তাই কোনও করুণা দেখানো সম্ভব নয়। তাই ন্যূনতম ৩০ বছর জেলের আদেশ দেন তিনি।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও তোলপাড়, মুখ্যমন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে ছবিও ভাইরাল
এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়। বিরোধী দল AIADMK নারী নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সরকারকে কাঠগড়ায় তোলে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি আন্নামালাই নিজের শরীরে চাবুক মেরে প্রতিবাদ জানান। ভাইরাল হয় মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে উদয়নিধি স্ট্যালিনের সঙ্গে জ্ঞানশেখরনের ছবি, যদিও তা উড়িয়ে দেয় শাসক DMK।
উল্লেখ্য, এই রায় শুধু এক নির্যাতিতার ন্যায় নয়, ক্যাম্পাসে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে। যে জায়গায় ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনা হয়, সেখানে কীভাবে ঘটে এমন ভয়াবহ ঘটনা—এই প্রশ্নের উত্তর চায় সমাজ।