DA : বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ এবার চরমে উঠেছে। একেবারে সরাসরি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন—২৭ জুনের মধ্যে যদি ২৫ শতাংশ ডিএ মেটানো না হয়, তাহলে রাজপথে নামা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। সুপ্রিম কোর্ট আগেই অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে রাজ্য সরকারকে ওই সময়সীমার মধ্যে ডিএ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও স্পষ্ট অবস্থান জানানো হয়নি। এর মধ্যেই আন্দোলনরত কর্মচারীদের তরফে এল কড়া হুঁশিয়ারি।
সরকার পালাবে না কি মানবে নির্দেশ? বাড়ছে উৎকণ্ঠা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি আদৌ ২৭ জুনের মধ্যে বকেয়া ডিএ মেটাবে? এই প্রশ্নে দোলাচলে রয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা থেকে শুরু করে পেনশনভোগীরাও। কারণ, যদি সরকার নির্দেশ না মানে, তাহলে একদিকে যেমন আদালতের অবমাননার অভিযোগ উঠবে, তেমনই রাজ্যজুড়ে শুরু হতে পারে গণ-আন্দোলন। আন্দোলনরত যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, “আমরা আদালতের আদেশ মান্য করি, সরকারও যেন মানে। যদি না মানে, তাহলে এবার আদালতের পথও খোলা রয়েছে আমাদের সামনে।”
‘সস্তা শ্রমিক বানানোর ষড়যন্ত্র’, বিস্ফোরক অভিযোগ
ভাস্কর ঘোষের অভিযোগ আরও বিস্ফোরক। তাঁর দাবি, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বর্তমান রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দক্ষ কর্মীদের সস্তা শ্রমিকে রূপান্তরিত করা। তিনি বলেন, “এক সময় মুখ্যমন্ত্রী বলতেন, যে সরকার ডিএ দিতে পারে না, তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। অথচ আজ সেই সরকারই ডিএ আটকে রেখেছে।” তাঁর আরও দাবি, অমিত মিত্র অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে ডিএ ও মূল বেতন কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে থাকে।
ডিএ বৈষম্যে বেসরকারি ক্ষেত্রেও চাপ
শুধু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, ডিএ না দেওয়ার ফলে প্রভাব পড়েছে বেসরকারি ক্ষেত্রেও। ভাস্কর ঘোষের বক্তব্য অনুযায়ী, “যখন সরকার নিজেই কর্মীদের বঞ্চিত করে, তখন বেসরকারি স্কুল, প্রতিষ্ঠানগুলোও একই পথে হাঁটে। ফলে সার্বিকভাবে বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে।” পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা বর্তমানে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে কম বেতন পান বলেও অভিযোগ তাঁর।
ডিএ মামলার পরবর্তী অধ্যায় কী? প্রস্তুত কর্মীরা
আগামী আগস্টে রয়েছে ডিএ মামলার পরবর্তী শুনানি। কিন্তু তার আগে ২৭ জুন সরকারের কাছে চূড়ান্ত পরীক্ষা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা সবরকম আইনি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। একাধিক কর্মী সংগঠন একজোট হয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আদালত অবমাননার মামলা থেকে শুরু করে, রাস্তায় প্রতিবাদ—সবটাই সম্ভব বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যৌথ মঞ্চের নেতারা।
সরকারের মুখে তালা, চাপ বাড়ছে প্রতিদিন
এই অবস্থায় এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও স্পষ্ট বিবৃতি মেলেনি। অর্থ দফতরের পক্ষেও বিষয়টি নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে জল্পনা আরও বাড়ছে। সরকারি মহলে চাপ বাড়াতে চাইছে আন্দোলনকারী কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা জানি, এই টাকা দিতে কত খরচ পড়বে। কিন্তু সেটা সরকারের দায়িত্ব। দায়িত্ব পালন না করলে আন্দোলন হবেই।”