রোগীর পরিবার রক্ত পাচ্ছে না, অথচ সরকারি হাসপাতালের সামনেই চলছে রক্তের কালোবাজারি। বিশেষ তদন্তে উঠে এল ভয়াবহ তথ্য—হামিদিয়া হাসপাতালের গেটের সামনেই হেলমেট পরে রক্ত বিক্রি করছে দুষ্কৃতীরা। রোগীর পরিবারের আর্তি, “A+ রক্ত চাই”, আর মুহূর্তের মধ্যে এক অটোচালক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে এক ‘ব্যবসায়ীর’। কিছু টাকা আগাম নিয়ে, এরপর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রক্তের পাউচ। দাম—২৪০০ টাকা!
কাদের মদতে চলছে এই চক্র?
সাংবাদিকদের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, এই রক্তব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ঘুরছে হাসপাতালের গেটের সামনে, অটোচালকদের দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে কোন গ্রুপ লাগবে, কত ইউনিট লাগবে। মুখ ঢাকা, মাথায় হেলমেট, যেন কোনও সিকিউরিটি গার্ড।
তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে—
-
হাসপাতালের বাইরের ওষুধের দোকান
-
এমনকি কিছু অসাধু চিকিৎসকও
-
এবং রক্ত জোগাড়ের লোকেরা, যারা ভোপাল থেকে চিরায়ু পর্যন্ত রক্ত সরবরাহ করছে
রক্ত কেনা মানেই জীবন বাঁচানোর লড়াই
এক রোগীর আত্মীয় NDTV-কে জানিয়েছেন, “হাসপাতালে রক্ত পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ এক অটোচালক এসে যোগাযোগ করিয়ে দেয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। ৫০০ টাকা আগাম নিয়ে ২৪০০ টাকায় দেয় রক্তের প্যাকেট।” রক্তের প্রয়োজন, সময় কম, বাধ্য হয়ে অনেকেই এই অবৈধ উপায়ে রক্ত কিনে নিচ্ছেন। অথচ এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং বিপজ্জনক।
কতটা নিরাপদ সেই রক্ত?
এই কালোবাজারি রক্ত কি সঠিকভাবে পরীক্ষা করা? তাজা নাকি পুরনো? সংক্রমণ-মুক্ত তো? কোনও প্রশ্নের উত্তর নেই। কিন্তু দরিদ্র পরিবারদের সামনে বিকল্পও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বিক্রি হওয়া রক্ত জীবনের বদলে মৃত্যুও এনে দিতে পারে। সংক্রমণ, এইচআইভি, হেপাটাইটিস–সবই হতে পারে ভুল রক্তে।
প্রশাসন নীরব কেন?
এই ঘটনা সামনে আসার পরও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। NDTV তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, এই চক্র ভোপালের বহু সরকারি হাসপাতালের সামনেই সক্রিয়। এমনকি বেশ কিছু চিকিৎসকও মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয় পুলিশ বা স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকেও মেলেনি স্পষ্ট কোনও প্রতিক্রিয়া।
রক্ত নয়, চলছে জীবন বাণিজ্য
যেখানে এক ফোঁটা রক্ত জীবন বাঁচাতে পারে, সেখানে সেই রক্তই হয়ে উঠেছে টাকার উৎস। মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের হৃদয়ে এমন ভয়ঙ্কর কালোবাজারি কি কেবল ‘চোরের চক্রান্ত’? না কি এর নেপথ্যে রয়েছে প্রশাসনিক নৈরাজ্য? প্রশ্ন অনেক। উত্তর ক’টা মিলবে, সেটাই দেখার।