মাত্র ১৭ বছরের এক কিশোরী, নাম কাফি, তার জীবনের গল্প আপনার চোখে জল এনে দেবে। বয়স খুব বেশি না হলেও, জীবনের লড়াইয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা একজন পূর্ণবয়স্কের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ছোটবেলায় অ্যাসিড হামলার শিকার হয়ে দু’চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিলেন কাফি। কিন্তু জীবনের লড়াইতে হার মানেননি তিনি। আজ সেই কাফি সারা দেশের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
২০১১ সালের হোলির সেই দুঃস্বপ্ন দিন
ঘটনাটা ঘটে ২০১১ সালে, হরিয়ানার হিসার জেলার বুধানা গ্রামে। কাফির বয়স তখন মাত্র তিন বছর। হোলির দিন তিন প্রতিবেশী, নিছক ঈর্ষার কারণে তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয়। পুড়ে যায় মুখ, হাত, আর চরতরে হারিয়ে যায় তাঁর দৃষ্টিশক্তি। দিল্লির এইমসে চিকিৎসা হলেও চোখ ফেরেনি আর। ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেন, দৃষ্টিশক্তি আর ফিরবে না।
অন্ধকারেও আলোর খোঁজ
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। চোখে দেখতে না পেলেও কান খোলা ছিল কাফির। অডিওবুক আর শ্রবণযোগ্য পাঠ্যসামগ্রীর মাধ্যমে ধাপে ধাপে পড়াশোনা চালিয়ে যান কাফি। সেই কষ্টের ফল পেয়েছেন কাফি। এর আগে দশম শ্রেণিতে ৯৫.২% নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কাফি। আর এবার সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণিতে ৯৫.৬% নম্বর পেয়ে স্কুলের টপার হয়ে গোটা বিশ্বের সামনে নজির গড়লেন তিনি।
চোখে না দেখেও কল্পনায় ছিল ভবিষ্যৎ
কাফির স্বপ্ন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করা এবং পরবর্তীতে একদিন আইএএস অফিসার হওয়া। কারণ? যাঁরা তাঁর জীবনে নরক নামিয়ে এনেছিলেন, তাঁরা আজও শাস্তিহীন। কাফি চান, আইএএস হয়ে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে।
স্কুলজীবনের শুরু গ্রাম থেকে, উত্থান চণ্ডীগড়ে
গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর শিক্ষাজীবন। পরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন চণ্ডীগড়ের দৃষ্টিহীনদের একটি স্কুলে। সেখান থেকেই একের পর এক বছরে শীর্ষস্থান ধরে রাখছেন কাফি। এবছর তাঁর পাশাপাশি আরও দুই সহপাঠী – সুমন্ত ও গুরুশরণ যথাক্রমে ৯৪% ও ৯৩.৬% নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।
বাবার চোখে গর্বের অশ্রু
চণ্ডীগড়ের মিনি সেক্রেটারিয়েটে চুক্তিভিত্তিক পিয়নের কাজ করেন কাফির বাবা। মেয়ের এই কৃতিত্বে গর্বে ও আবেগে চোখ ভিজে যায় তাঁর। কাফির দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এই কাহিনি শুধুই এক ছাত্রী কীভাবে ভালো ফল করেছে তার গল্প নয়—এ হল জীবনের কাছে না-হারা এক লড়াকু আত্মার গল্প। কাফির মতো মানুষদের কারণেই বারবার প্রমাণ হয়, চোখে না দেখেও ভবিষ্যৎ দেখা যায়। শুধু দরকার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর হৃদয়ে এক চিলতে আশা। কাফির এই সাফল্যে চোখের জল ফেলছে দেশ। কিন্তু সে জল দুঃখের নয়—গর্বের।