Jammu and Kashmir : কাশ্মীর উপত্যকায় এখন উৎসবের আমেজ। কারণ বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে ভূস্বর্গে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ, ৬ জুন, তাঁর হাত ধরেই কাশ্মীর পেতে চলেছে বিশ্ববাসীর চমকে দেওয়ার মতো এক কৃতিত্ব—বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতু চেনাব ব্রিজের উদ্বোধন। উদ্বোধনের আগের দিন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এক্সে (পূর্বতন টুইটার) পোস্ট করে লিখেছিলেন, “আগামীকাল কাশ্মীরের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী দিন। অবশেষে উপত্যকা রেলপথে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। চেনাব রেলসেতু শুধু একটি প্রকল্প নয়, এটি আমাদের স্বপ্নের প্রতিফলন।” এই পোস্টেই যেন অগ্রিম ঘোষণা হয়ে গেল, কতটা আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই প্রকল্পের সঙ্গে।
৪৬,০০০ কোটি টাকার প্রকল্পে বদলে যাবে উপত্যকার ভবিষ্যৎ
ওমরের পোস্ট শেয়ার করে প্রধানমন্ত্রী মোদী লিখেছেন, “৬ জুন আমার কাশ্মীরি ভাইবোনদের জন্য এক স্মরণীয় দিন। আজ উদ্বোধন করা হবে ৪৬,০০০ কোটি টাকার একাধিক পরিকাঠামো প্রকল্প, যার প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনে পড়বে।” প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কেবল চেনাব ব্রিজ উদ্বোধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একই সঙ্গে চালু হচ্ছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের নতুন রুট—কাটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত। যা পর্যটনকে বাড়তি গতি দেবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে।
চেনাব ব্রিজ: এক বিস্ময়
এই চেনাব রেলসেতু এমন এক স্থাপত্যের নিদর্শন যা চোখ ধাঁধানো। ৩৫৯ মিটার উঁচু এই সেতু প্যারিসের আইফেল টাওয়ারকেও পিছনে ফেলেছে। চেনাব নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি এখন বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতু। এর পাশাপাশি মোদী উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রথম অ্যাসিমেট্রিক কেবল-স্টেইড রেল সেতু—অঞ্জি ব্রিজ-এর কথাও। তিনিও জানালেন, এই দুটি ব্রিজ কাশ্মীর ও দেশের বাকি অংশের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সংযোগের প্রতীক হয়ে উঠবে।
USBRL প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম
চেনাব ব্রিজ ও অঞ্জি ব্রিজ দুটি পড়ছে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগ (USBRL) প্রকল্পের আওতায়। এটি এমন একটি প্রকল্প যা যেকোনও প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারবে। এটি কেবল রেল নয়, বরং কাশ্মীরের অর্থনীতি, পর্যটন এবং স্থানীয় জীবিকা-কে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। মোদী বলেন, “এই রেল সংযোগ কেবল স্টেশন থেকে স্টেশন নয়, বরং হৃদয় থেকে হৃদয়ের সংযোগ তৈরি করবে।”
আবহাওয়া রুখতে পারেনি এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত
প্রসঙ্গত, গত ১৯ এপ্রিল এই বন্দে ভারত ট্রেন ও চেনাব ব্রিজ উদ্বোধনের কথা থাকলেও, খারাপ আবহাওয়ার কারণে মোদীর সফর বাতিল হয়। অবশেষে ৬ জুন, বহু প্রতীক্ষার পর আজ সত্যি হল সেই মুহূর্ত। আজ জম্মু ও কাশ্মীরবাসী নতুন এক অধ্যায়ের সাক্ষী থাকলেন। এই রেল সংযোগ কেবল প্রযুক্তির জয় নয়, বরং উপত্যকার মানুষদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার ফলাফল।
কথায় আছে, পরিকাঠামো দেশের চালিকা শক্তি। আর সেই শক্তিকে আজ বাস্তবে রূপ দিল ভারত। বিশ্বের উচ্চতম রেলসেতু এখন আমাদের গর্ব। মোদীর এই সফর শুধুই রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত—যা ইতিহাসে লেখা থাকবে সোনার অক্ষরে। কাশ্মীরের এই নতুন যাত্রা কি এবার স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।