AI Student Suicide : মাত্র তিন দিন আগেই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পালন করেছিলেন তাঁর জন্মদিন। উচ্ছ্বসিত, প্রাণবন্ত চেহারায় ছবি উঠেছিল হোস্টেলের ঘরে। কিন্তু সেই মেয়েটি, মাত্র ১৯ বছর বয়সী তেজস্বিনী, আজ আর নেই। কর্নাটকের কোগাডু জেলার পোন্নামপেটের হালিগাত্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হোস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। ছাত্রী ছিলেন প্রথম বর্ষের — আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো কঠিন কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল প্রযুক্তির জগতে সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর। কিন্তু সেই স্বপ্ন থেমে গেল অকালেই।
সুইসাইড নোটে ‘ব্যাক লগ’-এর কথা, চাপেই বিদায়?
তেজস্বিনীর ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে লেখা ছিল, তিনি মোট ছ’টি বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। এতগুলি ‘ব্যাক লগ’ থাকায় তিনি মনে করছেন, আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো মানসিক সামর্থ্য তাঁর নেই। পড়াশোনার চাপেই আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন ওই ছাত্রী। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক চাপ, একাকীত্ব এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ফের একবার সামনে আনল এই মর্মান্তিক ঘটনা।
বন্ধ ঘর, চুপচাপ মৃত্যু – কীভাবে ধরা পড়ল?
বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টা। তেজস্বিনীর এক সহপাঠী লক্ষ্য করেন যে দীর্ঘ সময় হয়ে গেলেও সে ঘরের দরজা খুলছে না, কোনও সাড়া নেই। একাধিকবার ডাকাডাকি করেও তেজস্বিনীর প্রতিক্রিয়া না মেলায় বিষয়টি জানানো হয় হোস্টেল সুপারভাইজারকে। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান, ঘরের মধ্যেই ঝুলছে ওই ছাত্রীর নিথর দেহ। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পোন্নামপেট থানার পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে এবং তদন্ত শুরু করে।
AI পড়ুয়ার ‘ব্যাক লগ’ই আত্মহত্যার কারণ?
পুলিশ সূত্রে খবর, পড়ুয়া ছ’টি বিষয়ে পিছিয়ে ছিলেন। সেগুলো সামাল দিতে পারছিলেন না তিনি। হোস্টেল জীবন, পরিবার থেকে দূরত্ব এবং একা লড়াই – সব মিলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। AI ও মেশিন লার্নিং কোর্স কঠিন হওয়ায়, ছাত্রদের ওপর বিরাট চাপ পড়ে। একে তো প্রতিযোগিতা, তার উপর নতুন শহরে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই—এই সব মিলিয়েই হয়তো আরও ভেঙে পড়েন তেজস্বিনী।
রায়চুরের কন্যা, স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার
তেজস্বিনী ছিলেন উত্তর-পূর্ব কর্নাটকের রায়চুর জেলার বাসিন্দা। তাঁর বাবা মহন্তপ্পা জানিয়েছেন, মেয়েটি ছোট থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনার ঝোঁক থেকেই AI-তে ভর্তি হয়েছিল। জন্মদিনের সময়ও সে খুব খুশি ছিল, বন্ধুবান্ধবদের মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এই আচমকা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত পুরো পরিবার। তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, জন্মদিনের তিনদিন পরই মেয়েকে হারাতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের হাল ফিরবে কবে?
এই ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ভারতে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য কতটা উপেক্ষিত। প্রতিযোগিতার দৌড়ে নিজেদের নিঃশেষ করে ফেলছে বহু তরুণ-তরুণী। পরিবারের প্রত্যাশা, সামাজিক চাপ এবং কলেজের পরিবেশ – সব মিলে তৈরি করছে এক অদৃশ্য ফাঁস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং, মানসিক সহায়তা এবং হোস্টেলে একাধিক ‘চেক-ইন’ সিস্টেম থাকা উচিত।
আরও কত মৃত্যু হলে নড়বে প্রশাসন?
তেজস্বিনীর মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন বহু মানুষ—‘কত মৃত্যু হলে বদলাবে ব্যবস্থাপনা?’ আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়, কিন্তু তরুণ মনের সেই সংকট মুহূর্তে হাত ধরে তোলার মতো কেউ থাকেন না বলেই হয়তো এমন পরিণতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পরিবার, শিক্ষক—সবারই দায়িত্ব রয়েছে এই সংকট মোকাবিলার। তেজস্বিনীর মতো আর কেউ যেন হারিয়ে না যায়… এটুকুই প্রার্থনা।