ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশীয় যুদ্ধবিমান নির্মাণের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বহুদিন ধরেই হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) একচেটিয়াভাবে দেশের যুদ্ধবিমান নির্মাণে যুক্ত ছিল। কিন্তু এবার সেই একাধিপত্যের ইতি টেনে টাটা, আদানি, এলঅ্যান্ডটি-র মতো বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নিয়ে আসা হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী ফিফথ জেনারেশন ফাইটার প্রোগ্রাম—AMCA-র আওতায়।
প্রতিরক্ষা শিল্পে বেসরকারি খাতের প্রবেশ: বড় সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। বহুদিনের সরকারি নিয়ন্ত্রণ ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক মডেলের আওতায় কাজ ভাগাভাগি করা হবে এখন থেকে। ফলে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি উৎপাদনে সময় ও খরচও কমবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। এখন থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলিও HAL-এর পাশাপাশি সমানভাবে প্রকল্পে অবদান রাখতে পারবে, এবং এর ফলে দেশে তৈরি হবে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শিল্পভিত্তি—যেখানে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ হবে সফলতার চাবিকাঠি।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর বাস্তব প্রতিফলন
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এই সিদ্ধান্তকে সাহসী ও সময়োপযোগী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ভারতকে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা।” বিদেশি সংস্থার উপর নির্ভর না করে, দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বমানের স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করাই হচ্ছে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
কী থাকছে AMCA প্রকল্পে?
AMCA (Advanced Medium Combat Aircraft) প্রকল্পের প্রথম ধাপে তৈরি হবে মোট পাঁচটি প্রোটোটাইপ। প্রতিটি যুদ্ধবিমান থাকবে অত্যাধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তি, সেন্সর ফিউশন, সুপারক্রুজ ক্ষমতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-র সমন্বয়ে সজ্জিত। প্রথম উড়ান সম্ভাব্য ২০২৮ সালে, আর পুরো উৎপাদনে যেতে সময় লাগতে পারে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ভারত হবে পৃথিবীর গুটিকয়েক দেশগুলোর একটি, যারা নিজস্বভাবে ফিফথ জেনারেশন স্টেলথ জেট তৈরি করতে সক্ষম।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই যুদ্ধবিমান?
চীন এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি ইতিমধ্যেই তাদের বিমানবাহিনীকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য একটি ফিফথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান একান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু প্রতিরক্ষা নয়, এই জেট ভারতের কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, ভারতীয় বিমানবাহিনীর পুরনো হয়ে যাওয়া ফ্লিটকে বদলে এই নতুন স্টেলথ ফাইটার আগামী দশকে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষার স্তম্ভ হয়ে উঠবে।
এক নতুন প্রতিযোগিতা, এক নতুন প্রত্যাশা
HAL-এর একচেটিয়া অধিকার ভেঙে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সুযোগ দেওয়া মানে শুধুই নীতিগত পরিবর্তন নয়, এটি প্রতিরক্ষা শিল্পের একটি রূপান্তর। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিরক্ষা খাতে গতি আনবে, কর্মসংস্থান বাড়াবে, এবং ভারতকে বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা মানচিত্রে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু যুদ্ধবিমান নির্মাণের ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ভীত গড়ে তোলার দিকেও এক বড় পদক্ষেপ।