১৬ বছর! সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ১০ বছর অন্তর হওয়া কথা জনগণনার। কিন্তু ২০১১ সালের পর এত দীর্ঘ সময় ধরে থমকে ছিল এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৭ সালের ১ মার্চ থেকে সারা দেশে শুরু হবে জনগণনা। তবে তার আগেই, ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে শুরু হবে এই কাজ। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত?
তুষারাবৃত পাহাড়ই বড় কারণ
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই চার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এক বড় অংশ মার্চে বরফে ঢাকা থাকে। সেই আবহাওয়ায় গণনার মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ করাই প্রায় অসম্ভব। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আগে ভাগেই সেখানে শুরু করা হবে এই কাজ।
কেন এত দেরি?
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, শেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। পরবর্তী জনগণনা হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, কোভিড-১৯ অতিমারির জেরে সেই সময় এটি সম্ভব হয়নি। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) পাস হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনার আবহে কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে।
মোদী সরকারের প্রথম আদমসুমারি
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এটি হবে তাঁর প্রথম জনগণনা। সূত্রের খবর, এটি দুইটি পর্বে ভাগ করে করা হবে। শুধু তাই নয়, এবারের জনগণনায় জাতভিত্তিক তথ্যও সংগ্রহ করা হবে, যা আগে কখনও হয়নি। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে জাতি ও জনগোষ্ঠী সংক্রান্ত তথ্যও সংরক্ষিত থাকবে।
জাতগণনার নতুন অধ্যায়
জাতগণনা নিয়ে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক থাকলেও, কেন্দ্রীয় সরকার এবারে সেই পথে হাঁটছে। অর্থাৎ, আদমসুমারির পাশাপাশি জানার চেষ্টা করা হবে, কোন জাতির মানুষের সংখ্যা কত, তারা কোথায় বসবাস করেন ইত্যাদি। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে নীতি নির্ধারণে কাজে লাগানো হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই জাতভিত্তিক তথ্য ২০২৮ সালে প্রকাশ পেতে পারে বলে সূত্রের খবর।
জনগণনা কমিশনার কে?
বর্তমানে দেশের জনগণনা কমিশনার পদে রয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়কুমার নারায়ণ। ২০২6 সালের আগস্ট পর্যন্ত তাঁর কার্যকালের মেয়াদ বাড়িয়েছে মোদী সরকার।
জনগণনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রতিটি দেশের জন্যই জনগণনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, জনগণনার ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই ঠিক হয়—
- দেশের জনসংখ্যা কত
- কোন এলাকায় কত মানুষ বাস করেন
- কোন জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কত
- কোন রাজ্যে জনঘনত্ব বেশি
- বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প কীভাবে ও কোথায় প্রয়োগ হবে
এছাড়াও, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
দেরিতে হলেও আশার আলো
যদিও এটি ২০১১-র পরে বহু প্রতীক্ষিত জনগণনা, তবুও কেন্দ্রের এই ঘোষণা নতুন করে আশা জাগাচ্ছে। জাতগণনা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নততর পরিকল্পনা গঠনের সুযোগও তৈরি হতে চলেছে। তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে রাজনৈতিক বিতর্ক কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময় বলবে।