একদিকে ভূরাজনৈতিক চাপ, অন্যদিকে আত্মনির্ভরতার অঙ্গীকার। এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ভারত এবার ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরিতে চিনের সঙ্গে হাত মেলাল, তবে সাবধানে! সম্পূর্ণ ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার’ নয়, বরং প্রযুক্তি হস্তান্তরই হল মূল চাবিকাঠি। সম্প্রতি টাটার অধীনস্থ ভোল্টাস সংস্থার এক প্রতিনিধিদল চিন সফরে গিয়ে হাইলি গ্রুপ-এর সঙ্গে আলোচনায় বসে। যদিও যৌথভাবে ব্যবসা করার প্রস্তাব খারিজ করে তারা বলে, শুধুই ‘টেকনিক্যাল অ্যালায়েন্স’ই চলবে।
সরকারের ২৩ হাজার কোটির প্যাকেজ
ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে ভারতকে স্বনির্ভর করতে কেন্দ্র ঘোষণা করেছে ২৩,০০০ কোটি টাকার উৎপাদন-লাভ প্রণোদনা (PLI) প্যাকেজ। লক্ষ্য একটাই—চিনের উপর নির্ভরতা কমানো। এই প্যাকেজের অধীনে ডিক্সন, পিজি ইলেকট্রোপ্লাস্ট এবং ইপ্যাক ডিউরেবল-এর মতো সংস্থা চিনা সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশে তৈরি করবে ডিসপ্লে মডিউল, এয়ার কন্ডিশনার কম্প্রেসর, অন্যান্য উপাদান।
ডিক্সনের বড় পদক্ষেপ
ডিক্সন টেকনোলজিস চিনের HKC Corp-এর সঙ্গে ইতিমধ্যেই ডিসপ্লে ইউনিট তৈরিতে জয়েন্ট ভেঞ্চার গঠন করেছে। পাশাপাশি ভিভোর সঙ্গেও ভারতের বাজারের জন্য ডিসপ্লে তৈরিতে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এতেই পরিষ্কার, ভারত এখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ইলেকট্রনিক্সের উপর জোর দিতে শুরু করেছে। আর তার জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি, যা চিনা সংস্থার কাছ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে—যদিও সীমিত পরিসরে।
পিজি ইলেকট্রোপ্লাস্টের এয়ার কন্ডিশনার পরিকল্পনা
এছাড়াও, চিনের হাইলি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে PG Electroplast। লক্ষ্য একটাই—ভারতে এয়ার কন্ডিশনারের কম্প্রেসর তৈরির সুবিধে তৈরি করা। এই সিদ্ধান্ত ইন্ডাস্ট্রির দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ভারত এতদিন কম্প্রেসরের জন্য প্রায় পুরোপুরি চিনের উপর নির্ভর করত।
২০২০-র সীমান্ত উত্তেজনার পরে পরিবর্তন
২০২০ সালে গালওয়ানের পরে ভারত সরকার চিনা বিনিয়োগের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করে। তার পর থেকেই চিনা সংস্থাগুলি এখন সরাসরি বিনিয়োগ নয়, বরং প্রযুক্তি হস্তান্তরের পথ বেছে নিচ্ছে। এতে একদিকে বাজার ধরে রাখা যায়, আবার অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও গড়ে ওঠে।
ব্যবসা, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রেখে
এই মুহূর্তে ভারতের লক্ষ্য দুই দিকেই ভারসাম্য রাখা—আর্থিক লাভ এবং রাজনৈতিক সতর্কতা। ‘চিনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক’, কিন্তু গলা জড়িয়ে নয়। ভারতের এই কৌশলী অবস্থান দেশের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতাকে শুধু এগিয়ে দিচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতের বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক্স সাপ্লাই চেইনে ভারতের উপস্থিতি আরও জোরালো করে তুলছে।