India-Pakistan : ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের পারদ ফের চড়ছে। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন। এরপরই ভারত চালায় জবাবি সেনা অভিযান — ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাল্টা চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানও, যদিও সেই হামলা ভারত প্রতিহত করে দিয়েছে। এমন উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটেই এক চমকপ্রদ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা TASS সূত্রে জানা গিয়েছে, শরিফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৈয়দ তারিফ ফতেমি সেই চিঠি রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের হাতে তুলে দেন।
চিঠিতে কী ছিল?
চিঠিতে পাকিস্তান মূলত রাশিয়ার কাছেই আবেদন জানিয়েছে যে তারা যেন ভারতের সঙ্গে আলোচনার একটি নিরপেক্ষ মঞ্চ তৈরি করে দেয়। ইসলামাবাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—তারা দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনা করতে প্রস্তুত। রাশিয়া, আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন—যে কেউ যদি মধ্যস্থতা করতে চায়, তাহলে পাকিস্তান আলোচনায় বসবে।
ফতেমির বক্তব্য: ‘আমরা যুদ্ধ চাই না’
এই প্রসঙ্গে ফতেমি বলেন,“পাকিস্তান চায় না উপমহাদেশে আবার যুদ্ধ বাধুক। আমরা বিশ্বাস করি, কূটনীতিই একমাত্র পথ। তাই মধ্যস্থতা চেয়ে আমরা বিশ্ব নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছি।” এই বক্তব্যের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে শান্তির বার্তা, অন্যদিকে ধরা পড়েছে পাকিস্তানের সীমিত কূটনৈতিক পরিসরও।
কাশ্মীর হামলা: সংঘাতের সূত্রপাত
পহেলগাঁও হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জন নিরীহ মানুষের। ভারত দাবি করে, এই হামলার পেছনে রয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন। এরপরই এল ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ। কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয় সেনার তরফে।
এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা দ্রুত চরমে পৌঁছয়। দু’দেশই সেনা মোতায়েন বাড়ায়। জারি হয় সীমান্তে যুদ্ধবিরতি। তবে তার পরেও একে অপরের প্রতি আস্থাহীনতা থেকেই যায়।
রাশিয়ার ভূমিকায় নতুন মোড়?
পাকিস্তান বরাবর চায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় ভারত-পাক সম্পর্কের সমাধান হোক। কিন্তু ভারত সর্বদা বলে এসেছে—‘কাশ্মীর একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়’।
এতদিন পর্যন্ত আমেরিকা বা চিনের নামই উঠে এসেছে এই আলোচনায়। কিন্তু এবার রাশিয়ার দিকে নজর দিল ইসলামাবাদ। পুতিন প্রশাসনের তরফে এই চিঠি নিয়ে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে রাশিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতা ও ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস বিচার করলে বিষয়টি সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: রাজনৈতিক স্টান্ট না কূটনৈতিক চাল?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ একদিকে পাকিস্তানের শান্তির মুখোশ পরা কৌশল হতে পারে, অন্যদিকে তারা আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ওপর চাপ তৈরি করতে চায়। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ অবস্থান বরাবরই কঠোর—”সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।”
উল্লেখ্য, আলোচনার আশায় একটি চিঠি—কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তা কতটা কার্যকর, সময়ই বলবে। আপাতত ভারত শান্ত, তবে সতর্ক। পাকিস্তান নিঃশব্দে হাত বাড়াচ্ছে—তবে তাতে ভারত সাড়া দেবে কি?