ভারতের রপ্তানিনীতিতে নতুন পালক। ৩,০০০ কোটি টাকার বিশাল রেলচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আফ্রিকার দেশ গিনির সঙ্গে। ভারতীয় রেল জানিয়েছে, মোট ১৫০টি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইভোলিউশন সিরিজ ES43ACmi লোকোমোটিভ আফ্রিকায় পাঠানো হবে পর্যায়ক্রমে। সোমবার রেলমন্ত্রক এই খবর নিশ্চিত করে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের সাফল্য আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি পেল। শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, রেল-প্রযুক্তিতে ভারত যে বিশ্বে প্রতিযোগিতার দৌড়ে সামনের সারিতে, এই প্রকল্প তার প্রমাণ।
কোথা থেকে তৈরি হচ্ছে এই ট্রেন
বিহারের মারহোড়ায় অবস্থিত আধুনিক রেলওয়ে লোকোমোটিভ ফ্যাক্টরি থেকেই তৈরি হচ্ছে এই ইঞ্জিনগুলো। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে এই লোকোমোটিভগুলি, যেগুলি নির্দিষ্ট করে গিনির সিমান্দৌ লৌহ আকরিক প্রকল্প সাইটে ব্যবহারের জন্য রপ্তানি করা হবে। রেল সূত্রের খবর, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ৩৭টি লোকোমোটিভ রপ্তানি করা হবে প্রথম পর্যায়ে। দ্বিতীয় দফায় যাবে আরও ৮২টি এবং তৃতীয় বছরে বাকি ৩১টি ইঞ্জিন পাঠানো হবে।
লোকোমোটিভের বিশেষত্ব কী?
এই লোকোমোটিভগুলির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল—এগুলি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সজ্জিত। প্রতিটি ইঞ্জিনে থাকবে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাব, অগ্নি সনাক্তকরণ ও নির্বাপন ব্যবস্থা, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ এবং জলছাড়া টয়লেট।
৪,৫০০ HP শক্তির এই ইঞ্জিনে থাকবে অল্টারনেটিং কারেন্ট প্রোপালশন, রিজেনারিটিভ ব্রেকিং সিস্টেম এবং মাইক্রোপ্রসেসর-নিয়ন্ত্রিত অপারেশন। এমনকি ‘ডিস্ট্রিবিউটেড পাওয়ার ওয়্যারলেস কন্ট্রোল সিস্টেম’ বা DPWCS-এর মাধ্যমে মালবাহী ট্রেনের একযোগে কার্যক্রমও পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের নতুন রেল-চেহারা
একসময় যে ভারত বিদেশ থেকে রেলযন্ত্রাংশ আমদানি করত, আজ সেই ভারতই বিদেশে রেল রপ্তানি করছে—এ যেন সময়ের ঘুরপাক। শুধু গিনি নয়, ভবিষ্যতে আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও এই ধরনের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রেলমন্ত্রকের এক কর্তা। ভারতীয় রেলওয়ের এই প্রকল্প রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পও বিশ্বমঞ্চে স্থায়ী ছাপ ফেলবে।
ভারতের তৈরি ট্রেন আজ বিশ্ব দরবারে। গিনির মাটিতে ছুটবে মারহোড়ার লোকোমোটিভ। এই চুক্তি শুধু একটিমাত্র রপ্তানি পরিকল্পনা নয়, এটি দেশের প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও রপ্তানিযোগ্য ক্ষমতার নতুন সূচনা। আগামী দিনে ভারতীয় রেল যে আরও বিস্তৃত ভূমিকায় দেখা দেবে, তা বলাই বাহুল্য।