India Imports : ভারতের সঙ্গেই সবচেয়ে তিক্ত সম্পর্ক পাকিস্তানের। সীমান্ত উত্তেজনা হোক কিংবা জঙ্গি অনুপ্রবেশ—দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, এই পাকিস্তান থেকেই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে ভারত। একই চিত্র তুরস্ক ও বাংলাদেশের সঙ্গেও। যেখানে একদিকে রাজনৈতিক তরজা, অন্যদিকে চলছে দেদার আমদানি-রফতানি। প্রশ্ন উঠছে—শত্রু যখন, তখন এই অর্থনৈতিক বন্ধন কেন?
পাকিস্তান থেকে কেন কী আসে?
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চাপ, কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ—সব মিলিয়ে শীতল সম্পর্ক। তবুও, পাকিস্তান থেকে আসে সৈন্ধব লবণ, সুতির চাদর, চামড়া, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, এমনকি ড্রাই ফ্রুটস পর্যন্ত। ২০২4-২৫ অর্থবর্ষে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় আমদানি প্রায় ₹৩৫০ কোটি টাকার মতো হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য। এর কারণ কী? মূলত কিছু বিশেষ পণ্য, যেগুলির উৎপাদন পাকিস্তানে তুলনায় কম দামে হয়, তা ভারতীয় বাজারে চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় আমদানি বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ: বন্ধুত্ব না বাধ্যতা?
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে মধুর হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিতর্ক ও রাজনীতির কারণে সেই বন্ধন খানিকটা নড়বড়ে হয়েছে। শেখ হাসিনা পরবর্তী সরকার ভারতের ওপর অতটা নির্ভর নয় বলেই অনেকের ধারণা। তবু, দুই দেশের মধ্যে বস্ত্রশিল্পে একপ্রকার মিথোজীবী সম্পর্ক রয়েছে। ভারত থেকে সুতো রফতানি হয় বাংলাদেশে, আর সেখানেই তৈরি হয় জামাকাপড়—যা ফের রফতানি হয় ভারতেই। অর্থাৎ, পণ্য উৎপাদন ও বাজারের চাহিদা—দু’দিক থেকেই দু’দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
তুরস্ক: কূটনীতিতে ঠান্ডা, ব্যবসায় গরম
তুরস্ক বরাবরই পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক মঞ্চে ঘনিষ্ঠ মিত্র। কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান বরাবর ভারতের বিরোধিতায়। তবু তুরস্ক থেকে ভারত আমদানি করে কার্পেট, মোজাইক ল্যাম্প, টাইলস, এমনকি খনিজ তেলও। একইসঙ্গে ভারতও তুরস্কে রফতানি করে মেশিনারি, ফার্মাসিউটিক্যালস ও অর্গানিক কেমিক্যালস। ফলে কূটনৈতিক ঠান্ডা সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক আদানপ্রদান মোটেই থেমে নেই।
অর্থনীতি বনাম রাজনীতি
এই পুরো চিত্রটাই বোঝায়—রাজনীতি ও অর্থনীতি সবসময় একে অপরের ছায়াসঙ্গী নয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এমন এক ক্ষেত্র যেখানে লাভই শেষ কথা। রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও যদি কোনও পণ্যের চাহিদা থাকে, তবে তা বাজারে পৌঁছবেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘যুদ্ধ’ আর ‘বাণিজ্য’—এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক বুঝেই রাষ্ট্রনীতি চালায় নয়া দিল্লি। ফলে একদিকে সীমান্তে কড়া নজর, অন্যদিকে আমদানি-রফতানিতে খোলা দরজা।
ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান, তুরস্ক ও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। লাভ-লোকসান, প্রয়োজন ও কূটনৈতিক ব্যালান্স—সবকিছুর মেলবন্ধনেই এগোচ্ছে এই সম্পর্ক। একদিকে দেশরক্ষা, অন্যদিকে বাজারের বাস্তবতা—এই দ্বৈত চরিত্রই আজকের ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি।