ওয়াশিংটনে ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরামের লিডারশিপ সামিট এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়ে দিলেন—“খুব বেশি দেরি নেই, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি অদূর ভবিষ্যতেই চূড়ান্ত হবে।” এতেই ফের একবার আশার আলো দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তবে তলে তলে যে অস্বস্তি রয়েছে, তা গোপন থাকেনি—বিশেষ করে ট্যারিফ (শুল্ক) নিয়ে।
কূটনৈতিক মঞ্চে সদ্ভাব, কিন্তু ট্যারিফ নিয়ে মৌনতা
লুটনিক বলেন, “দুই দেশই ইতিমধ্যেই আলোচনার ভিত্তিতে কার্যকরী কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। ভারতের পক্ষ থেকে যোগ্য আলোচক বসেছে টেবিলে, আমাদের পক্ষ থেকেও।” তবে চুক্তির শর্ত প্রায় চূড়ান্ত হলেও ট্যারিফ হ্রাস বা ছাড় নিয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। যা ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন—আসলে কি পুরনো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সুরেই হাঁটছেন ট্রাম্প?
ট্রাম্প যুগে বন্ধুত্ব, কিন্তু শুল্কে ‘ছাড়’ নেই!
উল্লেখযোগ্য, ট্রাম্প বরাবরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তা সত্ত্বেও, তাঁর প্রেসিডেন্সিতে ভারতকে ছাড় দেননি ট্যারিফের বিষয়ে। ২৬% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসন, বিশেষ করে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর।
চীন, কানাডা, ইউরোপ—সব দেশের ক্ষেত্রেই এক রকম আচরণ ছিল ট্রাম্পের। তবে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বললেও বাণিজ্য ক্ষেত্রে ছাড়ের কোনও নজির এখনও পর্যন্ত নেই।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি: লক্ষ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার!
২০২৫ সালে ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯১ বিলিয়ন ডলার। মোদী-ট্রাম্পের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছুক ৫০০ বিলিয়ন ডলারে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে পণ্যের ওপর শুল্ক ও প্রবেশাধিকার সহজলভ্য করা ছাড়া উপায় নেই।
এপ্রিলে নয়াদিল্লি সফরে এসেছিলেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন তিনি। এরপরেই দু’দেশ জানায়, চুক্তির খসড়া প্রায় তৈরি, কিছু বিষয়ে মতৈক্য বাকি। কিন্তু তখনও ট্যারিফ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কোনও পক্ষ।
ভারতের অবস্থান: বাজারে প্রবেশাধিকারই মূল চাবিকাঠি
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, “চুক্তি হলে উভয় দেশের সংস্থাই বিপুল সুযোগ পাবে। বাজারে প্রবেশাধিকার, প্রযুক্তি আদান-প্রদান, বিনিয়োগ—সব দিক থেকেই ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হবে।” তাঁর কথায়, “আমরা এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছি, যাতে দু’দেশেরই ব্যবসায়ীরা সমান সুবিধা পান।”
চুক্তির প্রথম ধাপ: এই সপ্তাহেই বড় ঘোষণা?
জানা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের স্পেশাল সেক্রেটারি রাজেশ আগরওয়াল চার দিনের সফরে ওয়াশিংটনে ছিলেন। এ সপ্তাহেই ভারতে আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তির প্রথম ধাপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হতে পারে এই সপ্তাহেই।
উল্লেখ্য, চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এখন প্রায় শেষের পথে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—ট্যারিফ ইস্যুতে কি মোদীর কূটনৈতিক বন্ধুত্ব জিতবে, না ট্রাম্পের কঠোর বাণিজ্যনীতি? সময়ই দেবে উত্তর।