India-Israel Relations : ইরানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে যখন গোটা বিশ্ব উদ্বেগে তাকিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে, সেই সময় নতুন করে বিতর্কে জড়াল ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী। ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)-এর একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক মহল।
আইডিএফ একটি ইনফোগ্রাফিক শেয়ার করে বোঝাতে চেয়েছিল যে কেন তারা ইরানের উপর হামলা চালিয়েছে। সেই পোস্টে বিশ্বের একাধিক দেশের মানচিত্র দেখানো হয়, যেগুলির সঙ্গে ইরানের ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ’ সংযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই তালিকায় ভারতের নামও ছিল। কিন্তু ভারতের মানচিত্রটি ছিল ভুল—জম্মু ও কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়।
ভারতীয়দের ক্ষোভ: দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছেলেখেলা নয়
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। ভারতীয় নাগরিকরা প্রশ্ন তোলেন—এত বড় একটি দেশের সামরিক বাহিনী কীভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ভুল করতে পারে? ভারতের অনেকেই বিষয়টিকে সরাসরি দেশের সার্বভৌমত্বের অবমাননা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। কারণ, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোনও দ্বিমত থাকা চলবে না—এটাই ভারতের অবস্থান বরাবরের।
বিশিষ্ট কূটনৈতিকদের মতে, “এটা কোনও নিছক গ্রাফিক ডিজাইনের ভুল নয়, এটা একটি রাষ্ট্রীয় বার্তা। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে যখন এমন কিছু বলা হয়, তখন তার গুরুত্ব অনেক বেশি হয়।”
ক্ষমা চেয়েছে আইডিএফ, কিন্তু ভারত এখনও নীরব
বিতর্কের আঁচ চরমে ওঠার পর ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা ‘ভুলবশত’ ভারতের মানচিত্রে জম্মু-কাশ্মীরকে ভুলভাবে দেখিয়েছে। এবং তারা এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। একই সঙ্গে তারা মানচিত্রটি সরিয়ে নেয় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে।
তবে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত হয়তো বিষয়টি কূটনৈতিক স্তরে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে, তাই আপাতত প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি।
ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়বে কি?
ভারত ও ইজ়রায়েল দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগত বন্ধু। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতা রয়েছে। ইজ়রায়েল ভারতের অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। তবে এই ধরনের ঘটনায় সম্পর্কের উপর চাপ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “যে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। মানচিত্রের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে ভুল করলে, তা সম্পর্কের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে।”
বাকি বিশ্বের দৃষ্টি মধ্যপ্রাচ্যে, ভারত নজর রাখছে নেপথ্যে
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের নজর ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাতের দিকে। সেখানে পরমাণু অস্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে। কিন্তু ভারত কূটনৈতিকভাবে অনেকটাই সংযত আচরণ করছে। দেশের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সরকার হয়তো এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা মাথায় বিবেচনা করছে।
তবে একটি জিনিস স্পষ্ট—কোনও মিত্র দেশ যদি ভারতের সার্বভৌমত্বকে খাটো করে দেখে, তা দেশের মানুষ কোনওদিন মেনে নেবে না। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়াতেই তার প্রমাণ মিলেছে।
উল্লেখ্য, মানচিত্রে একটা রেখা শুধু ভৌগোলিক বিভাজন নয়, তা একটা দেশের অস্তিত্ব, আত্মপরিচয় এবং সম্মানের প্রতীক। ইজ়রায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এমন ভুল আশা করা যায় না। যদিও তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে, তবুও এমন ভুল যেন ভবিষ্যতে আর না হয়—এটাই প্রত্যাশা। ভারত কীভাবে এই ঘটনার কূটনৈতিক জবাব দেয়, এখন সেটাই দেখার।