জঙ্গি কার্যকলাপে মদত ও সক্রিয় যোগের অভিযোগে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন মঙ্গলবার বরখাস্ত করল তিন সরকারি কর্মীকে। বরখাস্ত হওয়া এই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন একজন পুলিশ কনস্টেবল, একজন স্কুল শিক্ষক এবং একজন কলেজের অশিক্ষক কর্মচারী। প্রশাসনের দাবি, এদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে যে তারা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা সক্রিয়ভাবে তাদের সাহায্য করছিলেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে লস্কর-ই-তৈবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন। এই অভিযোগ সামনে আসতেই রাজ্য প্রশাসন ৩১১(২)(সি) ধারা অনুযায়ী তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।
কে কোথায় কাজ করতেন? কী অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে?
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার বাসিন্দা। গোয়েন্দা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নিয়মিতভাবে জঙ্গিদের গোপন তথ্য দিতেন এবং কখনও কখনও অস্ত্র পরিবহনেও সাহায্য করতেন।
স্কুল শিক্ষক, যিনি দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ছাত্রদের মাঝে চুপিসারে ধর্মীয় চরমপন্থা ছড়ানোর চেষ্টা করতেন এবং কিছু সন্দেহজনক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন।
অন্যদিকে কলেজের অশিক্ষক কর্মী ছিলেন শ্রীনগরের একটি সরকারি কলেজে নিযুক্ত। তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি স্থানীয় জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং বিভিন্ন সময়ে তাদের আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করতেন।
প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বার্তা
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, “সরকারি কর্মীদের কেউ যদি দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেন বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনও রকম সহানুভূতির জায়গা নেই।” তিনি আরও বলেন, এই ধরণের ঘটনা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাসের সম্পর্ককে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়, তাই এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
৩১১(২)(সি) ধারা কী বলছে?
ভারতীয় সংবিধানের ৩১১(২)(সি) ধারার আওতায় কোনও সরকারি কর্মী যদি এমন অপরাধে যুক্ত হন, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ, তবে সরকারি তদন্ত ছাড়াই তাঁর চাকরি খারিজ করা যায়। এই মামলাতেও সেই ধারাই প্রয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রাথমিক তদন্তেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কী বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে জম্মু-কাশ্মীরে সরকারি চাকরির আড়ালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো নয়, গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে তোলে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, প্রশাসনের পদক্ষেপ একেবারে সঠিক ও প্রয়োজনীয়, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন নিরীহ মানুষদেরও হয়তো কখনও এই প্রক্রিয়ার শিকার হতে হতে পারে।
উল্লেখ্য, একদিকে প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বাস্তবায়ন, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে থাকা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির মুখোশ উন্মোচনের ঘটনা—সব মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীর আবারও উঠে এসেছে জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রে। সরকার জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও এই ধরণের কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।