Karnataka : কর্ণাটকে এক ভয়াবহ পদপিষ্ট-কাণ্ডে একাধিক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুতে যখন রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া, ঠিক তখনই রাজনীতির পারদ চড়াতে মাঠে নামল বিজেপি। দলীয় কর্মী ও শীর্ষ নেতৃত্বকে পাশে নিয়ে কর্নাটক রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাল গেরুয়া শিবির। তাঁদের মূল দাবি—নিহতদের পরিবারপিছু ১ কোটি টাকা করে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। সঙ্গে অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্তের দাবিও তুলেছে বিজেপি।
“অবহেলা নয়, এটা হত্যার শামিল”
বেঙ্গালুরুতে বিজেপির এক বিশাল জমায়েতে বক্তৃতা দিতে উঠে কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বাসবরাজ বোম্মাই বলেন,
“এটা কেবল দুর্ঘটনা নয়। এটা প্রশাসনিক অবহেলার ফল। মৃতদের পরিবারকে শুধু সমবেদনা জানিয়ে দায় শেষ করলে চলবে না। কংগ্রেস সরকারকে এর দায় নিতে হবে।”
বিজেপির তরফে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শুধুমাত্র নিম্নস্তরের সরকারি আধিকারিকদের শাস্তি দিয়ে দায় এড়ানো যাবে না। এই ব্যর্থতা মন্ত্রিসভা স্তর থেকে শুরু হয়েছে। তাই দোষী মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে হবে এবং উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে।
বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, “কারা দায়ী এই মৃত্যুর জন্য?”
পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি নেতৃত্ব একবাক্যে বলছে, “সরকারি অনুষ্ঠানে কেন নিরাপত্তার এত ঘাটতি? এমন বড় জমায়েতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছিল কোথায়?” একটি ভিডিও ঘিরে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে, অনুষ্ঠানে প্রবেশের গেট খুলতেই হুড়োহুড়ি করে ঢোকার চেষ্টা করছেন মানুষজন। এক পর্যায়ে কেউ পড়ে গেলে তার উপর দিয়েই পেরিয়ে যাচ্ছেন বাকিরা। এই ভিডিও সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিজেপিও এই ভিডিও সামনে এনে সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে কাঠগড়ায় তুলেছে।
কংগ্রেসের পাল্টা, “বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে”
তবে কংগ্রেস শিবির এই সমালোচনাকে একেবারেই রাজনৈতিক বলে ব্যাখ্যা করছে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া সাংবাদিকদের বলেন,
“এই মুহূর্তে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকতে চাই। বিজেপি এই শোকের মুহূর্তে রাজনীতি করছে। তদন্ত চলছে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, সরকার ইতিমধ্যেই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে যারা পুরো ঘটনার তদন্ত করবে। আহতদের চিকিৎসা ও মৃতদের পরিবারকে সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিজেপির দাবির কেন্দ্রে ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার
বিজেপি নেতাদের মতে, কংগ্রেস সরকার শুধু ‘দায়মুক্তির খেলা’ খেলছে। তাঁদের বক্তব্য, “একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মানুষ প্রাণ হারালে তার দায় পুরো সরকারের। সেই দায় এড়ানো যায় না। আমাদের দাবি—প্রতি পরিবারকে ১ কোটি টাকা এবং দোষী মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিশ্চিত হোক।”
রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, “সরকারি অনুষ্ঠানে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? শুধু রাজনৈতিক বিক্ষোভে কিছু হবে না, চাই বাস্তব পদক্ষেপ।”
উল্লেখ্য, কর্ণাটকের পদপিষ্ট-কাণ্ডে মৃত্যু যেন শুধুই একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার কাহিনি নয়—এ যেন এক রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দান হয়ে উঠেছে। কতটা ন্যায়বিচার পাবে মৃতদের পরিবার? বিজেপির দাবির জবাবে কী পদক্ষেপ নেয় কংগ্রেস সরকার? এই প্রশ্নগুলির উত্তর এখন সময়ই দেবে। তবে একথা নিশ্চিত, এই ঘটনায় কর্নাটকের রাজনৈতিক আবহে উষ্ণতা অনেকটাই বেড়ে গেল।